র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা: বিচক্ষণতার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করুন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ইস্যুতে বাংলাদেশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অনুমেয় প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এই ক্ষতি মেটাতে প্রত্যাশিতভাবে দ্রুত কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।

র‌্যাব কর্তৃপক্ষ যুক্তি দিচ্ছে, সংস্থাটি দেশের আইন ও সংবিধান মেনে কাজ করে। র‌্যাব প্রধান বলেছেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে র‌্যাবের কার্যক্রম তদন্ত করা হয়।

আইনমন্ত্রী বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা সরাসরি অস্বীকার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত ব্যবস্থাকে 'দুর্ভাগ্যজনক' উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেছেন, এটি র‌্যাবের বিরুদ্ধে 'কাল্পনিক অভিযোগ'। ক্ষমতাসীন দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদেরও বিশ্বাস, নিষেধাজ্ঞাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও একতরফা।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বহু বছর ধরে দেশে ও কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফোরামে আলোচনায় রয়েছে। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়তই পুলিশ বা র‌্যাব সদস্যদের সঙ্গে গ্রেপ্তার বা পলাতক ব্যক্তিদের 'বন্দুকযুদ্ধের' সংবাদ আসে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এ ধরনের ঘটনা কমে গেলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

গতকালও সাতক্ষীরায় এক বৃদ্ধকে আটকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশি হেফাজতে তার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, তিনি লক-আপের ভেতর 'আত্মহত্যা' করেছেন। তবে পরিবারের দাবি, তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার আছে। তাই দেশ-বিদেশের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারীরা গ্রেপ্তারের পর বিচার ও শাস্তির জন্য যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চাপ দিচ্ছে।

বিশ্বের অনেক শক্তিশালী সরকার রাষ্ট্রীয় সংস্থার মানবাধিকার লঙ্ঘনকে (বিশেষ করে বিচারবহির্ভূত হত্যা) একটি বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে এবং কঠোর ভাষায় এর নিন্দা জানায়।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালনের সময় কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক সনদ আছে।

এ ছাড়া, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তাড়া করার সময় কীভাবে কাজ করতে হবে এবং কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে—সে বিষয়েও পুলিশ ও র‌্যাবের জন্য স্পষ্ট নির্দেশিকা আছে।

কিন্তু, সেগুলো অনুসরণ করা হচ্ছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আমরা কর্তৃপক্ষের অত্যাবশ্যক প্রতিক্রিয়া ছাড়াই বিচারবহির্ভূত হত্যার অনেক ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করেছি। এসব ঘটনা সরাসরি অস্বীকার করা সীমিত পরিসরে অভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে, তবে এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে খুব বেশি পার্থক্য তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে এটা বলা দরকার যে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুপ্রতীম দেশ। তাদের পারস্পরিক সুবিধার জন্য কয়েক দশক ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক আছে।

সুতরাং, অস্বীকারের পথে না গিয়ে, যুক্তরাষ্ট্র কেন র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে—অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে।

আমরা বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যথাযথ কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা আমাদের জ্যেষ্ঠ র‌্যাব সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণগুলোর মূলে যেতে সাহায্য করবে।

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম