‘হে পথিক, অক্সিজেন দিয়ে, ছায়া দিয়ে তোমাদের বাঁচাই, আমাকে বাঁচান’
সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় শতবর্ষী একটি গাছের গায়ে টাঙানো লাল ব্যানারে লেখা 'হে পথিক, আমাকে হত্যার প্রস্তুতি চলছে। অক্সিজেন দিয়ে, ছাঁয়া দিয়ে তোমাদের বাঁচাই। আমাকে বাঁচান।'
এই আকুতি যে বৃক্ষের গায়ে বাঁধা হয়েছে, সেটিকে উন্নয়নের বলি হওয়া থেকে গত ২০ অক্টোবর রক্ষা করেন সিলেটের পরিবেশকর্মীরা।
আজ বুধবার দুপুরে সেই গাছকে বাঁচিয়ে রাখতে এই কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ভূমিসন্তান বাংলাদেশ।
প্রতিবাদী এ কর্মসূচিতে পরিবেশকর্মীরা জানান, বনবিভাগের অনুমোদন ছাড়াই গত ১৯ অক্টোবর গাছটি কাটতে শুরু করে সিটি কর্পোরেশন। বিষয়টি পর দিন পরিবেশকর্মীদের দৃষ্টিগোচর হয়। ঘটনাস্থলে প্রতিবাদ জানালে গাছ কাটা বন্ধ হয়। কিন্তু আগেই বিক্রি হয়ে যাওয়া এ গাছটি যে কোনো সময় কাটার আশঙ্কা আছে।
তারা জানান, এই গাছটি রক্ষা গেলেও সম্প্রতি রক্ষা করা যায়নি নগরীর শাহজালাল উপশহরের অন্তত ২০০টি গাছ। এছাড়াও বিগত কয়েক বছর ধরে নগরীর সর্বত্র উন্নয়নের নামে নির্বিচারে গাছ কাটছে সিটি কর্পোরেশন।
কর্মসূচিতে বাপার সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, 'এ নগরে বাছবিচার ছাড়াই গাছ কাটা হয়। প্রয়োজনে গাছ কাটা হলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু বিনা প্রয়োজনে একটি গাছ কাটারও নিয়ম নেই। কিন্তু আমরা দেখেছি সিসিকের পক্ষ থেকে তাই হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'মাত্র ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে শতবর্ষী এ গাছটিও কাটতে শুরু করেছিল নগর কর্তৃপক্ষ। সেদিন আটকানো হলেও এখনো গাছটি কাটার চিন্তা রয়েছে সিসিকের। তাই উপায়ান্তর না দেখে আমরা আজকের এ উদ্যোগটি নিলাম। এ প্রতিবাদের মাধ্যমে আমরা নগরীর সর্বত্র নির্বিচারে গাছ কাটার নিন্দা জানাই।'
স্থানীয় বাসিন্দা কামাল আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন প্রত্নসংগ্রাহক ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার, স্থানীয় বাসিন্দা মুশতাক আহমেদ, হারুন অর রশীদ, কিবরিয়া চৌধুরী সুমন, সৈয়দ মাহবুব, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের আল আমিন সরদার, ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর প্রমূখ।
কর্মসূচি থেকে আগামী ১৩ নভেম্বর সকাল ১১টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে 'উন্নয়ন প্রকল্পের নামে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন বিষয়ে গণশুনানী' অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়। সিলেটের প্রকৃতিবাদী সংগঠনদের সমন্বিত উদ্যোগে এ গণশুনানী আয়োজন হবে।