৬ মাসে ধরলায় বিলীন ৬০ পরিবারের বসতভিটা-মসজিদ-মাদ্রাসা-বাজার

এস দিলীপ রায়
এস দিলীপ রায়
6 May 2022, 05:34 AM
UPDATED 6 May 2022, 11:45 AM

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের দ্বীপচর ফলিমারীতে ৩০০ পরিবারের বসবাস। বর্তমানে ধরলা নদীর উদরে হারিয়ে যাচ্ছে সীমান্তবর্তী 'দ্বীপচর ফলিমারী'।

দ্বীপচর ফলিমারীর লোকজন কৃষিকাজ ও ধরলা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গেল ৬ মাসে ধরলা নদীতে বিলীন হয়েছে প্রায় ৬০টি পরিবারের বসতভিটা, একটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা ও একমাত্র বাজার। নদীগর্ভে চলে গেছে কয়েকশ বিঘা আবাদি জমি। বসতভিটা হারানো পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জমিতে। দ্বীপচর ফলিমারীতে ধরলা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

এখানকার বাসিন্দা আসমা বেগম (৪৮) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা ৪ দফায় বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। পরিবারের ৬ জন সদস্য আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জমিতে। তার স্বামী আইনুল ইসলাম ধরলা নদীতে মাছ ধরে সংসার চালান। জমি কিনে বসতভিটা তৈরি করার সামর্থ্য তাদের নেই।

আসমা বেগম বলেন, 'হামার যাবার কোন জাগা নাই। ধরলা নদী এ্যালাং ভাইঙবার নাইকছে। ফলিমারী গ্রাম যদি নদীত চলি যায় তাকহইলে হামরাগুলা কোনটে কোনা যামো। ফলিমারী চরোত হামারগুলার মায়া মমতা আছে। এই চর ছাড়ি যাবার ইচ্ছা করে না। কষ্ট হয় তাঙ হামরাগুলা এই চরোত পড়ি থাকি।'

bhaangn.jpg
ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

দ্বীপচর ফলিমারী এলাকার আজগর আলী (৫৮) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গ্রামের মসজিদটি ধরলার উদরে চলে যাওয়ায় এখানে এখনো মসজিদ বানানো সম্ভব হয়নি। এখন নদী পাড় হয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে হচ্ছে। মাদ্রাসাটি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় এখানকার ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই দ্বীপচরে একটি বাজার ছিল। সেখানে অনেক দোকানপাট ছিল। কিন্তু পুরো বাজারটি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় দোকানপাটগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখানকার অধিবাসিরা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটায় সমস্যায় পড়েছে। 

আজগর আলী বলেন, 'হামরাগুলা নদীভাঙন থাকি বাঁইচবার জইন্যে দরখাস্ত দিয়া আইসবার নাইকছি। কিন্তু, এ্যালাং কোন কাজ হবার নাইকছে না। ধরলা নদীর ভাঙন না ঠ্যাকা গ্যাইলে পুরা গ্রামটায় নদীত চলি যাইবে।'

দ্বীপচরের বাসিন্দা মোকসেদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ফলিমারী এলাকাটির পশ্চিমে ও উত্তরে ভারতের কাটাতারের বেড়া। পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ধরলা নদী। একসময় এই দ্বীপচরটিতে অনেক আবাদি জমি ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে তা নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। এখন যেটুকু আবাদি জমি রয়েছে সেগুলোও বালুতে ঢাকা। এসব জমিতে ভুট্টা ও কলা চাষ হচ্ছে। প্রতিদিন নদী ভাঙছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কিছু বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে দিয়েছে কিন্তু সিসি ব্লক তৈরি করে ভাঙন ঠেকানোর কোনো পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে এবং তারা পরিদর্শনও করেছেন কিন্তু কোন ফলপ্রসু উদ্যোগ নিচ্ছে না।

মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে আপাতত ধরলা নদীর ভাঙন প্রাথমিকভাবে ঠেকানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এ ব্যাপারে বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। নদীভাঙন স্থায়ীভাবে ঠেকানো না গেলে দ্বীপচর ফলিমারীকে রক্ষা করা কঠিন হবে।'

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফলিমারী এলাকাটি দ্বীপচর আর সীমান্তবর্তী হওয়ায় সিসি ব্লক দিয়ে এখানে নদীভাঙন ঠেকাতে অনেক অর্থের প্রয়োজন হবে। তারপরও ৩০০ মিটার তীর রক্ষার জন্য এক কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।'