সম্ভাবনা সত্ত্বেও বাড়ছে না বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার

জাগরণ চাকমা
জাগরণ চাকমা
25 August 2023, 06:41 AM
UPDATED 25 August 2023, 12:54 PM

বাংলাদেশে ধীরে ধীরে বৈদ্যুতিক গাড়ির চালু হলেও বেশি দাম ও আমদানি শুল্ক এবং নিবন্ধন জটিলতার কারণে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি আশানারূপভাবে বাড়েনি।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈদ্যুতিক গাড়ি একদিন স্থানীয় বাজারে আধিপত্য বিস্তার করবে। কারণ, বিশ্বব্যাপী বিকল্প জ্বালানিচালিত গাড়ির চাহিদা বাড়ছে এবং এসব গাড়ির পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে মানুষ সচেতন হচ্ছে।

দেশে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন শুরু হয়। তারপর টেসলা, অডি ও পোর্শের মতো ব্র্যান্ডের তৈরি প্রায় ৭০টি গাড়ি বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) নিবন্ধিত হয়েছে।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে চার্জিং স্টেশন স্থাপনের একটি কাঠামো গঠনে 'বৈদ্যুতিক যানবাহন চার্জিং গাইডলাইন' প্রস্তুত করা হয়েছে।

বিআরটিএ'র সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক এস কে মো. মাহবুব-ই-রাব্বানী বলেন, নিবন্ধন দেওয়ার সময় বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির পাওয়ার ক্যাপাসিটি বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশে বিএমডাব্লিউর একমাত্র পরিবেশক এক্সিকিউটিভ মোটরস লিমিটেড আগামী ২৬ আগস্ট বিএমডাব্লিউ আইএক্সথ্রি এম স্পোর্ট কার বাজারে আনতে যাচ্ছে।

এক্সিকিউটিভ মোটরসের পরিচালক (অপারেশন) আশিক উন নবী বলেন, 'বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিএমডাব্লিউর বৈদ্যুতিক গাড়ি বিএমডাব্লিউ আইএক্সথ্রি এম স্পোর্ট চালুর সুযোগ পেয়ে আমরা খুশি।'

তিনি আরও বলেন, এক্সিকিউটিভ মোটরস টেকসই অটোমোটিভ সমাধানের অগ্রদূত এবং আইএক্সথ্রি এম স্পোর্ট সম্পূর্ণভাবে তারই প্রতিফলন।

বিএমডব্লিউ আইএক্সথ্রিএম স্পোর্ট বিদ্যুতায়ন কর্মক্ষমতা, ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি ও ব্রান্ড ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ।

'আমরা বিশ্বাস করি, এই যুগান্তকারী বৈদ্যুতিক কারটি গ্রাহকদের পছন্দ হবে এবং অটোমোটিভ ল্যান্ডস্কেপে নতুন মান স্থাপন করবে,' যোগ করেন তিনি।

এর আগে জার্মান ব্র্যান্ড অডির একমাত্র পরিবেশক প্রোগ্রেস মোটরস লিমিটেড জানায়, চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি শুরু করে তারা।

প্রোগ্রেস মোটরসের চিফ অপারেশন অফিসার ফজলে সামাদ বলেন, তারা এ পর্যন্ত ৩৬টি গাড়ি সরবরাহ করেছে।

প্রোগেস মোটরস স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি) অডি ই-ট্রন প্রতি ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকায় বিক্রি করছে।

প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা ও চট্টগ্রামে ফাস্ট চার্জিং স্টেশন স্থাপন করেছে। একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ হতে ২০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগে। এ ধরনের একটি চার্জিং স্টেশন স্থাপনে প্রায় দেড় কোটি টাকা প্রয়োজন।

ফজলে সামাদ বলেন, জটিল নিবন্ধন প্রক্রিয়া, চার্জিং স্টেশনের অভাব ও জ্বালানিচালিত গাড়ির তুলনায় বেশি দামের কারণে বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানি বাড়েনি। তবে, একসময় দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার অনেক বড় হবে।

'বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে আধিপত্য বিস্তার করবে, কারণ এগুলো পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী।'

ফজলে সামাদ জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বর্তমানে আমদানি করা ইলেকট্রিক গাড়ির ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করছে। এছাড়াও ৩ লাখ টাকা অগ্রিম আয়কর প্রযোজ্য।

মার্সিডিজ বেঞ্জ বাংলাদেশ ২০২৪ সালের শুরুতে ইলেকট্রিক গাড়ি চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

মার্সিডিজ বেঞ্জের হেড অব সেলস কাজী রেজাউল হাসান তুষার বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় সাতটি মডেল আছে। যেখানে প্রিমিয়াম গ্রাহকদের মাঝে এই ব্র্যান্ডের চাহিদা বেশি।

টাটা মোটরসের স্থানীয় পরিবেশক নিটল-নিলয় গ্রুপ গত মার্চে ঢাকায় সর্বশেষ অটো শোতে টাটা ব্র্যান্ডের ইলেকট্রনিক গাড়ি প্রদর্শন করে।

তবে নিটল-নিলয়ের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ মনে করেন, ইলেকট্রিক গাড়ির দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনলে বাজার বড় হবে।

চাহিদা মেটাতে ইলেকট্রিক গাড়ির দাম ২০ লাখ টাকা থেকে শুরু করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'কেবল কিছু বিত্তশালী মানুষ ইলেকট্রিক গাড়ি কিনছেন।'

অন্যান্য দেশের মতো এই গাড়ির বাজার উন্নয়নে সরকারকে অন্তত আগামী পাঁচ বছরের জন্য কম আমদানি শুল্ক প্রবর্তনের পরামর্শ দেন তিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'রাজস্ব প্রশাসন ইতোমধ্যে হাইব্রিড গাড়ির জন্য আমদানি শুল্ক সুবিধা বাড়িয়েছে এবং প্রচলিত গাড়ির চেয়ে শুল্ক কম। বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রেও একই নীতি প্রযোজ্য।'

তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হলো, তাদের বেস প্রাইস পেট্রোল ইঞ্জিনের গাড়ির চেয়ে বেশি।

তিনি জানান, শুধু বাংলাদেশে নয়, উন্নত দেশগুলোতেও ভোক্তাদের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় দাম।

ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক গাড়ির মূল্যায়ন ও অটোমোটিভ রিসার্চ কোম্পানি কেলি ব্লু বুকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে বৈদ্যুতিক গাড়ির গড় মূল্য ছিল ৫৩ হাজার ৪৬৯ ডলার। যেখানে অন্যান্য গাড়ির গড় মূল্য ছিল ৪৮ হাজার ৩৩৪ ডলার।

তিনি আরও বলেন, 'এছাড়া বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য চার্জিং স্টেশন, ব্যাটারি বিক্রি ও রিসাইক্লিং প্লান্টসহ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অবকাঠামো এখনো প্রস্তুত হয়নি।'

এদিকে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি দ্রুত গতিতে বাড়ছে।

ব্যাটারিচালিক বৈদ্যুতিক ও প্লাগ-ইন হাইব্রিডসহ বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি গত বছর ১০ মিলিয়ন অতিক্রম করেছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের গ্লোবাল ইভি আউটলুক ২০২৩ আশা করছে, এই বছরের শেষে বিক্রি ১৪ মিলিয়নে দাঁড়াবে।

জর্জিয়াভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি কক্স অটোমোটিভের এক জরিপে দেখা গেছে, আগামী বছরের মধ্যে নতুন বা ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার কথা ভাবছেন অর্ধেকের বেশি গ্রাহক। ২০২১ সালে মাত্র ৩৮ শতাংশ ভোক্তা একই কথা বলেছিলেন বলে জানিয়েছে সিএনএন।