মসলা রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ২৫ শতাংশ

মো. আসাদুজ্জামান
মো. আসাদুজ্জামান
11 October 2023, 10:14 AM
UPDATED 11 October 2023, 16:29 PM

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মসলা রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত প্রবাসী বাংলাদেশি ও এশিয়ার অন্যান্য দেশের কাছে বাংলাদেশি মসলার চাহিদা থাকায় রপ্তানি আয় বেড়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে মসলা রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ১১ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

গত তিন বছর ধরে এই খাতের রপ্তানি আয় বাড়লেও ২০২০-২১ অর্থবছরের আয়কে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় মসলা রপ্তানি থেকে ১২ দশমিক ১৪ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪১ শতাংশ বেশি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে বিপুল সম্ভাবনা এবং বিশ্বব্যাপী এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি থাকা সত্ত্বেও রপ্তানিকারক দেশের সংখ্যা বাড়াতে পারেনি।

মসলা উৎপাদনকারীরা বলেন, আরেকটি প্রধান কারণ হলো চাহিদা অনুযায়ী বিকিরণের মাধ্যমে মসলা জীবাণুমুক্ত করার সুবিধা না থাকা।

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে তিন ধরনের মসলা রফতানি হচ্ছে, এগুলো হলো- আস্ত, গুঁড়ো ও মিক্সিং। সবচেয়ে বেশি চাহিদা আছে- হলুদ (জৈব বেস), শুকনো মরিচ, তিল (কালো, সাদা বাদামী ও লাল), ধনিয়া বীজ, কালো জিরা বীজ, জিরা (মিষ্টি), মেথি বীজ এবং মেথি পাতা।

প্রধান রপ্তানি দেশগুলোর মধ্যে আছে- সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, ইরাক, ওমান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও বড় বাজার আছে।

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের মসলার ভালো সম্ভাবনা আছে। কিন্তু, সরকারি সহায়তার অভাবে বাংলাদেশ এখনো রপ্তানি চাহিদা মেটাতে পারছে না।'

'বৈশ্বিক মান নিশ্চিত করতে বিকিরণ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আমরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছি। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে সক্ষমতা না থাকায় প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এই সুযোগকে কাজে লাগাতে সরকারের উচিত বিকিরণ সুবিধা বাড়ানো।'

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ৩০টির বেশি দেশে নিয়মিত মসলাজাতীয় পণ্য রপ্তানি করে থাকে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, 'মহামারি পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক চাহিদা বাড়ায় বাজার বেড়েছে। মূলত বর্তমানে উপসাগরীয় ও পশ্চিমা দেশগুলোতে বসবাসরত এশিয়ানরা বাংলাদেশি মশলার প্রধান ভোক্তা।'

তিনি আরও বলেন, 'মহামারি পরবর্তী সময়ে এশিয়ার দেশগুলোর বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজে ফিরেছেন। ফলে ভোক্তা বেড়েছে।'

দেশের মোট মসলা রপ্তানির প্রায় ৭০ শতাংশই প্রাণ গ্রুপের। অন্য রপ্তানিকারকদের মধ্যে আছে- বিডি ফুডস লিমিটেড, অ্যালিন ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড ও এসিআই ফুডস লিমিটেড।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিবিজনেস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের উচিত প্রথমে প্রধান মসলাজাত পণ্য আমদানির বিকল্প নিয়ে ভাবা।'

তিনি বলেন, 'প্রতি বছর বিদেশ থেকে মসলা আমদানি করতে বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। আমরা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানির বিকল্প দিকে মনোনিবেশ করতে পারি।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মসলা আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে ৪১৭ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার। একই সময়ে বাংলাদেশ ৪২ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন ডলারের মসলা রপ্তানি করেছে।

তিনি বলেন, 'মাঝে মাঝে অভ্যন্তরীণ কাঁচাবাজারে পেঁয়াজ ও মরিচের দাম অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। ফলে দাম কমাতে সরকারকে আমদানির অনুমতি দিতে হয়।'

'জমির ঘাটতি থাকায় আমরা সব মসলা উৎপাদন করতে পারব না। তাই বিশ্বজুড়ে এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির কাছে চাহিদা থাকায় বাছাইকৃত মসলাজাত পণ্য রপ্তানি দিকে মনোনিবেশ করতে হবে,' যোগ করেন তিনি।