ট্রাম্পের ভাষণ যেভাবে এডিট করার জেরে পদত্যাগ করলেন বিবিসির শীর্ষ ২ নির্বাহী

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
10 November 2025, 09:24 AM
UPDATED 10 November 2025, 15:45 PM

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে তৈরি এক তথ্যচিত্র সম্পাদনার জেরে সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেছেন বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও বার্তাবিভাগের প্রধান ডেবোরাহ টারনেস। একই দিনে বিবিসির এরকম শীর্ষ দুই কর্মকর্তার পদত্যাগের ঘটনা নজিরবিহীন।

গত সোমবার দ্য টেলিগ্রাফ বিবিসির ফাঁস হওয়া এক অভ্যন্তরীণ মেমো ফাঁস করে। এ থেকে জানা যায়, 'প্যানোরামা' তথ্যচিত্রে ট্রাম্পের ভাষণের দুটি অংশ এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়, যাতে মনে হচ্ছিল ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গাকে তিনি উসকে দিয়েছিলেন।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেছিলেন— 'আমরা ক্যাপিটলে হেঁটে যাব এবং আমরা আমাদের সাহসী সিনেটর, কংগ্রেসম্যান ও নারীদের উৎসাহিত করব।'

কিন্তু প্যানোরামা তথ্যচিত্রে সম্পাদনায় দেখানো হয়েছে, ট্রাম্প বলছেন— 'আমরা ক্যাপিটলে হেঁটে যাব... এবং আমি আপনাদের সঙ্গে থাকব। আর আমরা লড়াই করব। আমরা প্রাণপণে লড়ব।'

তথ্যচিত্রে প্রথম অংশের পর যে অংশটি জোড়া লাগানো হয়, সেটি ট্রাম্প বলেছিলেন ৫০ মিনিটেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে।

মেমো ফাঁস হওয়ার পরই বিবিসিকে ঘিরে সমালোচনা শুরু হয়। হোয়াইট হাউজ সংস্থাটিকে '১০০ ভাগ ভুয়া' আখ্যা দিয়েছে। দুই কর্মকর্তার পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন, বিবিসির শীর্ষ ব্যক্তিরা পদত্যাগ করেছেন কিংবা বরখাস্ত হয়েছেন, 'কারণ তারা ৬ জানুয়ারি আমার দেওয়া একটি ভালো বক্তব্যকে বিকৃত করেছে।'

সোমবার বিবিসি চেয়ারম্যান সামির শাহ একটি পার্লামেন্টারি কমিটিতে বক্তব্য দেবেন। আশা করা হচ্ছিল, ট্রাম্পের ভাষণ সম্পাদনা নিয়ে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। এর আগেই দুই শীর্ষ নির্বাহী পদত্যাগ করলেন।

তাদের পদত্যাগ নিয়ে শাহ বলেন, এটি 'বিবিসির জন্য একটি দুঃখের দিন।' তিনি শীর্ষ কর্মকর্তা ডেভি'র প্রতি নিজের ও বিবিসি বোর্ডের পূর্ণ সমর্থন থাকার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, 'তবুও, আমি বুঝতে পারি তার ওপর ব্যক্তিগত ও পেশাগত চাপ অব্যাহত ছিল, যা তাকে আজ এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। পুরো বোর্ড তার পদত্যাগের এই সিদ্ধান্ত এবং এর কারণকে সম্মান জানাচ্ছে।'

ফাঁস হওয়া মেমোটি লিখেছিলেন মাইকেল প্রেসকট। তিনি বিবিসির এডিটোরিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস কমিটির স্বাধীন এক্সটারনাল এডভাইজর ছিলেন। গত জুনে তিনি এই পদ থেকে বিদায় নেন।

মেমোতে তিনি বিবিসির তৃতীয় লিঙ্গ বিষয়ক সংবাদ প্রতিবেদনগুলো নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি আরও লেখেন, যখন বিষয়গুলো সামনে আসে, তখন বিবিসির ব্যবস্থাপনা পর্ষদ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তার মধ্যে 'হতাশা' জন্ম নেয়।

দ্য টেলিগ্রাফ প্রকাশিত অভ্যন্তরীণ মেমোতে আরও দেখা যায়, বিবিসি আরবির ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের পক্ষপাতদুষ্ট কাভারেজের বিষয়েও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিবিসির সংস্কৃতি ও মিডিয়া বিষয়ক সম্পাদক কেটি রাজাল বলেন, আমার মনে হয়, সর্বশেষ বিতর্ক তার (টিম ডেভি) জন্য অতিরিক্ত চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এর আগে একের পর এক সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন। আরেকটি সংকট মোকাবিলার শক্তি তার কাছে অবশিষ্ট ছিল না।

বিবিসির সাবেক কমিউনিকেশন প্রধান জন শিল্ড বলেন, 'মহাপরিচালকের কাজ হলো জনসেবার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি।' তিনি আরও বলেন, 'তিনি খুব কর্মক্ষম নেতা এবং বাস্তব পরিবর্তন এনেছেন, কিন্তু একেবারে এত চাপ সহ্য করা সম্ভব নয়।'

রোববার সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে টিম ডেভি বলেন, সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো বিবিসিও নিখুঁত নয়। আমাদের সবসময় উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক থাকতে হবে। যদিও এটি আমার সিদ্ধান্তের একমাত্র কারণ নয়, তবে বিবিসি নিউজকে ঘিরে চলমান বিতর্ক নিঃসন্দেহে আমার সিদ্ধান্তে ভূমিকা রেখেছে।

'মোটের ওপর বিবিসি ভালো কাজ করছে, তবে কিছু ভুলও হয়েছে, আর মহাপরিচালক হিসেবে এর পূর্ণ দায় আমাকে নিতে হবে।'

রোববার রাতে এক বিবৃতিতে ডেবোরা টারনেস বলেন, প্যানোরামা সংক্রান্ত বিতর্ক এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা এখন বিবিসির জন্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে। তিনি আরও যোগ করেন, 'এর দায় শেষ পর্যন্ত আমারই।'