ভারতীয় পাসপোর্ট মান হারাচ্ছে কেন?

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
1 November 2025, 14:11 PM

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত। আছে চতুর্থ বৃহত্তম সমরশক্তি ও পঞ্চম শীর্ষ অর্থনৈতিক দেশের তকমা। এরপরও এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার এই দেশটির পাসপোর্টের মান কমছে। কিন্তু, কেন?

আজ বিবিসির এক প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়—কেন বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে ভারতীয় পাসপোর্টের মান পড়ে যাচ্ছে?

এতে আরও বলা হয়, চলতি বছরের শুরুতে ভারতের এক ট্রাভেল ইনফ্লুয়েন্সার তার দেশের পাসপোর্টের দুর্বল মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তার সেই ভিডিওটি সমাজমাধ্যমে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতীয় পর্যটকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেও পশ্চিমের উন্নত দেশ ও ইউরোপ তাদের স্বাগত জানায় না।

তার সেই হতাশার প্রতিফলন দেখা গেল হেনলি পাসপোর্ট সূচকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, পৃথিবীর ১৯৯ দেশের মধ্যে ভারতের পাসপোর্টের অবস্থান ৮৫তম।

বিবিসির পক্ষ থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

পাসপোর্ট সূচকে দেখা যাচ্ছে—রুয়ান্ডা, ঘানা ও আজারবাইজানের মতো তুলনামূলক ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর অবস্থান যথাক্রমে ৭৮তম, ৭৪তম ও ৭২তম।

২০২১ সালে বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচকে ভারতের অবস্থান ছিল ৯০তম। এর আগের দশকে তা ৮০-র ঘরে ছিল। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো এশিয়ার অন্যান্য বড় অর্থনীতির দেশগুলোর পাসপোর্ট ক্রমাগত শক্তিশালী হলেও ভারতের ক্ষেত্রে তা হয়নি।

গত বছরের মতো সিঙ্গাপুর এবারও পাসপোর্ট সূচকের শীর্ষে আছে। এই দেশের নাগরিকরা ভিসা ছাড়া ১৯৩টি দেশ ভ্রমণ করতে পারেন। সূচকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরা ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন ১৯০টি দেশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা জাপানের নাগরিকরা ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন ১৮৯টি দেশ।

বিপরীতে, ভারতের নাগরিকরা বিনা ভিসায় ভ্রমণ করতে পারেন ৫৭টি দেশ। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ার জনগণও একই সুবিধা পান। এই দেশটি পাসপোর্ট সূচকে ভারতের সঙ্গে অবস্থান ভাগাভাগি করেছে। অর্থাৎ, সূচকে মৌরিতানিয়ার অবস্থানও ৮৫তম।

একটি দেশের পাসপোর্টের মান সাধারণত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সেই দেশের গুরুত্ব তুলে ধরে। সেই দেশের নাগরিকদের বাধাহীন চলাফেরার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও বেড়ে যায়। পাসপোর্ট দুর্বল হলে সেই দেশের নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণ কষ্টকর ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও, ভ্রমণের জন্য তাদেরকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারতের পাসপোর্টের মান কমলেও সে দেশের নাগরিকদের বিনা ভিসায় ভ্রমণের সুযোগ আগের তুলনায় বেড়েছে। আগের তুলনায় বেশি সংখ্যক দেশ ভারতের নাগরিকদের এই সুযোগ দিচ্ছে।

যেমন, ২০১৪ সালে বিজেপির প্রার্থী হয়ে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে দেশটির নাগরিকরা বিনা ভিসায় ৫২টি দেশ ভ্রমণ করতে পারতেন। তখন এর পাসপোর্টের অবস্থান ছিল ৭৬তম। এক বছর পর তা হয় ৮৫তম।

২০২৩ ও ২০২৪ সালে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভারতের পাসপোর্টের অবস্থান হয় ৮০তম। চলতি বছর তা আবার ৮৫তম হয়। ২০১৫ সালে ভারতীয়রা বিনা ভিসায় ৫২টি দেশ ভ্রমণ করতে পারতেন। ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয় ৬০টি ও ২০২৪ সালে হয় ৬২টি দেশ।

কেন এমন হচ্ছে?

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন পরিস্থিতির মূল কারণ জনগণের চলাচল। অর্থাৎ, ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক কারণে যে দেশের নাগরিকরা যত বেশি চলাচল করেন সেই দেশের নাগরিকদের বিনা ভিসায় চলাচলের সুযোগ তত বেড়ে যায়।

২০০৬ সালে সারাবিশ্বে বিনা ভিসায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভারতের গড় সংখ্যা ছিল ৫৮টি। ২০২৫ সালে তা বেড়ে হয় ১০৯টি দেশ।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, প্রচুর সংখ্যক চীনা নাগরিক বিদেশ ভ্রমণ করায় গত এক দশকে দেশটির নাগরিকদের বিনা ভিসায় ভ্রমণের জন্য দেশের সংখ্যা ৫০ থেকে বেড়ে ৮২ হয়। একই সময়ে সূচকে চীনের পাসপোর্টের অবস্থান ৯৪ থেকে ৬০তম হয়েছে।

আর্মেনিয়ায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত আচল মালহোত্রা মনে করেন যে, এটি ছাড়াও অন্যান্য কারণ আছে। যেমন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। তার মতে, অন্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে একটি দেশটির নাগরিকদের আচরণও বিষয়টির সঙ্গে জড়িত।

তিনি জানান, ১৯৭০-এর দশকে ভারতীয়রা পশ্চিমের অনেক দেশ বিনা ভিসায় ভ্রমণ করতে পারতেন। ১৯৮০ দশকে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে শিখদের জন্য পৃথক স্বাধীন দেশ খালিস্তানের জন্য আন্দোলন শুরু হলে পরিস্থিতি বদলে যায়। তখন দেশে-বিদেশে ভারতের ইমেজ সংকট তৈরি হয়।

আচল মালহোত্রা বলেন, 'অনেক দেশ অভিবাসন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করে। ভারত থেকে প্রচুর সংখ্যক মানুষ অন্য দেশে চলে যায়। অথবা, ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও নিজ দেশে ফেরেন না। ফলে ভারতের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে।'