আগুনে বুয়েট শিক্ষার্থী মেয়ের মৃত্যু, শেষ হয়ে গেল পুলিশ বাবার স্বপ্ন

By স্টার অনলাইন রিপোর্ট
1 March 2024, 11:23 AM
UPDATED 1 March 2024, 17:41 PM

অসুস্থতাজনিত কারণে ২০১৮ সালে যখন মা মারা যান, সেই সময় লামিশা ইসলামের বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। মায়ের মৃত্যুর পর এই বয়সেই ছোট বোন এবং বাবার দেখাশোনা করতেন তিনি।    

লামিশার বাবা নাসিরুল ইসলাম পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) হিসেবে কর্মরত। স্ত্রীর মৃত্যুর পর দুই মেয়ের কথা ভেবে আর বিয়ে করেননি। মেয়েদের নিয়ে রাজধানীর রমনায় পুলিশ কমপ্লেক্সে থাকতেন তিনি।

তার সহকর্মীরা জানান, নাসিরুল ইসলাম মেয়েদের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে একইসঙ্গে বাবা ও মায়ের ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। স্বপ্ন ছিল, দুই মেয়ে বাবাকে ছাড়িয়ে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবেন। বড় মেয়ে লামিশা সেই পথেই হাঁটছিলেন। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে লামিশা ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেকানিক্যাল বিভাগে।

সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের আগ পর্যন্ত। গতকাল রাতে লামিশা তার বন্ধুর সঙ্গে রাজধানীর বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যান। সেখানে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড প্রাণ কেড়ে নেয় তার। শেষ হয়ে যায় মেয়েকে নিয়ে বাবার সব স্বপ্ন।

ঘটনার পর থেকে নাসিরুল ইসলাম যেন নির্বাক হয়ে গেছেন। তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার সহকর্মীরা বলছেন, তিনি কাঁদছেন না। শুধু শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।

এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী (বর্তমানে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রমনা কমপ্লেক্সের শিমুল ভবনের লিফটে তার লামিশার সঙ্গে দেখা হয়েছিল।

'বুঝতেই পারিনি মৃত্যু তার এত কাছাকাছি চলে এসেছে', তিনি বলেন।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে লামিশার মরদেহ ফরিদপুরে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাকে দাফন করা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক বিবৃতিতে আজ বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশ পুলিশের একজন অতিরিক্ত ডিআইজির বুয়েট শিক্ষার্থী মেয়ে বেইলি রোডের আগুনে প্রাণ হারিয়েছেন।'

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। পুলিশ প্রধান আহত ও চিকিৎসাধীনদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।