জবি শিক্ষার্থী জোবায়েদ হত্যায় মামলা হয়নি এখনো, ‘তদন্তের স্বার্থে’ সব তথ্য জানাচ্ছে না পুলিশ

By নিজস্ব সংবাদদাতা, জবি
20 October 2025, 12:46 PM
UPDATED 20 October 2025, 19:07 PM

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা মো. জোবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া সব তথ্য তদন্তের স্বার্থে এখনই জানানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবন মাঠে জোবায়েদের জানাজার নামাজ শেষে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মল্লিক আহসানউদ্দিন সামি এ কথা বলেন।

গতকাল রোববার বিকেলে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা এলাকার একটি ভবনের সিঁড়ি থেকে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিসংখ্যান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ ওই এলাকায় উচ্চমাধ্যমিকের এক ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতে যেতেন বলে জানা গেছে।

ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনো মামলা হয়নি। তবে, গতরাতে ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় বংশাল থানা পুলিশ।

ঘটনার পর জবির ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে হত্যার বিচার চান এবং গত রাতে তারা বংশাল থানার সামনে জড়ো হন।

উপকমিশনার আহসানউদ্দিন সামি বলেন, 'ঘটনা সম্পর্কে কিছু গণমাধ্যম ভুল তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। সঠিক তথ্য আমাদের হাতে আছে, তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করতে পারছি না।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং আশা করছি আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে আপডেট দিতে পারব।'

এখনো মামলা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা পুরো বিষয়টি তদন্ত করছি। প্রকৃত আসামিদের শনাক্তের পর সবকিছু মিলিয়ে মামলা রুজু করা হবে।'

'কেউ রেহাই পাবে না। আসামিদের ধরতে কিছুটা সময় লাগলেও আমরা মূল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা ধরা পড়লে স্পষ্ট হবে আর কেউ এতে জড়িত ছিল কিনা,' যোগ করেন তিনি।

এর আগে পুলিশ কর্মকর্তা আহসানউদ্দিন বলেন, 'প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জোবায়েদকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। ভবনের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।'

'ছেলে আমার লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে'

আজ দুপুরে জানাজায় জোবায়েদের বাবা মো. মোবারক হোসেন, জবিশিক্ষক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

জানাজার আগে কাঁদতে কাঁদতে জোবায়েদের বাবা বলেন, 'ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়েছিলাম পড়াশোনা করার জন্য, কিন্তু আজ সে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। ওর মাকে আমি কী বুঝ দেবো।'

'প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের কাছে আমি প্রকৃত খুনির বিচার চাই। ডিজি মহোদয় আমাকে আশ্বস্ত করেছেন আমার ছেলে হত্যার বিচার হবে। আমি আমার ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে যাব,' বলেন তিনি।

জোবায়েদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়। সেখানেই তার মরদেহ দাফন করা হবে বলে জানান বাবা মো. মোবারক।

এ সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসিরুদ্দিন নাসির বলেন, 'গণঅভ্যুত্থাণের পর ছাত্রদলের ৪ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যকাণ্ড। আমরা বিশ্বাস করি দ্রুত সময়ে ঘাতকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।'

জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।'

২৪ ঘণ্টায়ও মামলা হয়নি

ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও মামলা হয়নি বলে জানান লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসানউদ্দিন সামি। তিনি বলেন, 'নিরাপরাধ কেউ যেনো ভোগান্তির মধ্যে না পড়ে, সেজন্য আমরা কাজ করছি। জোবায়েদের বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা প্রকৃত দোষীদের আসামি করতে চায়।'

দ্য ডেইলি স্টারের কাছে আসা একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রোববার বিকেল ৪টা ৩৯ মিনিটের দিকে নূর বক্স রোডের মক্তা এলাকায় কালো টি-শার্ট পরা কালো ব্যাকপ্যাকসহ দুই তরুণ বংশাল রোডের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে।

পুলিশের ধারণা, এই দুই তরুণ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

জোবায়েদ হত্যায় শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থী মাহির রহমানকে প্রাথমিকভাবে মূল অভিযুক্ত বলে ধারণা করছে পুলিশ। ঈর্ষা থেকেই হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পর জানিয়েছে পুলিশ।

জানতে চাইলে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আটক মেয়েটি ও মাহির একই পাড়ায় বড় হয়েছেন এবং স্কুলজীবন থেকে তাদের সম্পর্ক ছিল।'

ওসি বলেন, 'মেয়েটি জোবায়েদকে পছন্দ করে বলায় মাহির ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। রাগ থেকে এক বন্ধুর সহযোগিতায় সে জোবায়েদকে হত্যা করে।'

তিনি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদের সময় মেয়েটি খুবই শান্ত ছিল। মেয়েটির দাবি, হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সে কিছুই জানত না। তার বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে।

নিহত জোবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ওই মেয়ে, তার বাবা-মা, প্রেমিক মাহির ও তার বন্ধু নাফিসকে আসামি করে মামলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওসি আমাদের পরামর্শ দেন যেন এতজনের নাম না দিই, এতে মামলাটা "দুর্বল" হয়ে যেতে পারে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা মামলা গ্রহণ করব। আমি তাদের বলেছি, অভিযুক্তদের নাম চূড়ান্ত করার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করতে।'