নির্বাচনের বাজেট নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই: অর্থ উপদেষ্টা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। নির্বাচন কমিশনের জরুরি প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পরও জরুরি ব্যয়ের প্রয়োজন দেখা দিলে তা মেটানো যাবে। এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। নির্বাচন কমিশনের যদি জরুরি কোনো প্রয়োজন হয়, সেটি আমরা মেটাতে পারব।
আজ সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একইদিনে অনুষ্ঠিত হলে নিরাপত্তা ও জনবল মোতায়েনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় বাড়তে পারে। এ কারণে নির্বাচনী বাজেট পুনর্বিন্যাস করতে হতে পারে।
তিনি বলেন, 'আমরা যখন প্রথম প্রস্তাব পেয়েছিলাম, তখন গণভোট ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই একইদিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করলে অতিরিক্ত ব্যয় হবে। বেশি জনবল, বেশি নিরাপত্তা, বেশি লজিস্টিক লাগবে।'
অর্থ উপদেষ্টা জানান, নির্বাচন কমিশন তাদের প্রাথমিক ব্যয় প্রাক্কলনে গণভোটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেনি।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসীদের ভোটার তালিকাভুক্তকরণ কার্যক্রমেও অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলো প্রস্তুতিমূলক কাজ করছে। কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহ করছেন, এ জন্য ওভারটাইমও লাগছে। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত বাজেট চাইতে পারে। আমরা সহায়তা করব।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মন্তব্য, নির্বাচনের সঙ্গে একইদিনে গণভোট আয়োজন নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা জানান, বিষয়টি তার এখতিয়ারের বাইরে। তবে, তিনি মনে করেন—একইদিনে ভোট নেওয়াই বেশি যৌক্তিক।
তিনি বলেন, 'এটি সরকারের সিদ্ধান্ত। দুই দিনে ভোট করলে দুবার পুরো মেশিনারি—রিটার্নিং অফিসার, শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা সবাইকে নামাতে হবে। এটি সহজ নয়। অনেক দেশেই একইদিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হয়। লজিস্টিক বিবেচনায় দুটি একসঙ্গে করাই ভালো।'
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বডিক্যাম ব্যবহারের বিষয়ে এক প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা জানান, সরকার ইতোমধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তাদের নিজস্ব বাজেট ব্যবহার করে সরঞ্জাম সংগ্রহ করবে।
তিনি বলেন, ক্রয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বরাদ্দকৃত বাজেট থেকেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো স্বচ্ছতার সঙ্গে এগুলো কিনবে।
কত সংখ্যক ক্যামেরা কেনা হবে—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এটি তার দায়িত্ব নয়। 'এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তাদের সংস্থার বিষয়। কোন স্থানে ক্যামেরা লাগবে, তা নির্বাচন কমিশন জানাবে। পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য সংস্থা ক্যামেরা কিনবে ও ব্যবহার করবে।'
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি ৪০ হাজার ক্যামেরা কেনা হতে পারে, এমন অনুমান নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। বলেন, 'সংখ্যা নিয়ে মন্তব্য করব না। প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ব্যয় যুক্তিসঙ্গত রাখার চেষ্টা করব।'
এ ছাড়া তিনি জানান, সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বিদায়ী সদস্যদের জন্য ১০০টি নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব অর্থ বিভাগ বাতিল করেছে।
তিনি বলেন, 'অনেক সময় ভুল বার্তা যায়। এগুলো অতিরিক্ত গাড়ি নয়, রিপ্লেসমেন্ট ইউনিট ছিল। তারপরও আমরা মনে করেছি, এখন এটি প্রয়োজন নেই। তাই বাতিল করেছি।'
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'ডিসেম্বরেই জাতীয় বাজেট সংশোধন হবে, আর জানুয়ারির মধ্যে আমরা পরবর্তী সরকারের জন্য নির্বাচন বাজেট প্রস্তুত রাখব। সব কিছুই ওপেন।'