শেখ হাসিনা, জয় ও পুতুলের বিরুদ্ধে পৃথক ৩ মামলার রায় আজ

এমরুল হাসান বাপ্পী
এমরুল হাসান বাপ্পী
27 November 2025, 02:56 AM
UPDATED 27 November 2025, 12:00 PM

পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট জালিয়াতির ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা তিনটি দুর্নীতি মামলার রায় আজ বৃহস্পতিবার।

গত ২৩ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন ১৩টি শুনানি শেষে এই তারিখ নির্ধারণ করেন।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ২৩ জন আসামির মধ্যে ২২ জন আদালতে হাজির না হওয়ায় দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বেলা ১১টায় রায় ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ২৮ জন; হাসিনা ও পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা আরেকটি মামলায় ২২ জন; এবং হাসিনা ও জয়সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্য মামলায় ২৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। 

পিপি আরও বলেন, মামলাগুলোর অধিকাংশ সাক্ষীই অভিন্ন।

তিনটি মামলার পাশাপাশি, ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ আগামী ১ ডিসেম্বর হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে প্লট জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের করা আরেকটি দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

প্রসিকিউশন জানায়, হাসিনা, তার ভাগ্নি আজমিনা সিদ্দিক, টিউলিপ এবং ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা আরও দুটি দুর্নীতি মামলার বিচার এখন একই আদালতে চলছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, তিনটি মামলায় অভিযুক্ত টিউলিপ তার ক্ষমতা ব্যবহার করে রেহানা, ববি এবং আজমিনার জন্য প্লট পেয়েছেন।

মামলার রেকর্ড অনুসারে, ছয়টি মামলায় ৫৩ জন সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর মধ্যে ছয়জন দুদক কর্মকর্তা, চারজন রাজউক কর্মচারী এবং গৃহায়ন ও সাতজন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী।

পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের অধীনে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ১২ থেকে ১৪ জানুয়ারি তাদের ঢাকা সমন্বিত জেলা অফিস-১-এ ছয়টি মামলা দায়ের করে।

দুদকের অভিযোগ, রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে শেখ হাসিনা তার ছেলে  জয়, পুতুল, বোন শেখ রেহানা, তার ছেলে ববি এবং মেয়ে আজমিনার জন্য পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক অঞ্চলে অবৈধভাবে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট অবৈধভাবে বরাদ্দ নিয়েছেন, যদিও বিদ্যমান বিধি অনুসারে তারা এর যোগ্য ছিলেন না। 

২৫ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে ছয়টি অভিযোগপত্র দাখিল করে।  ছয়টি মামলাতেই হাসিনাকে সাধারণ আসামি করা হয়েছে। পরে ৩১ জুলাই হাসিনা, রেহানা, জয়, পুতুল, ববি, টিউলিপ এবং আজমিনাসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

ছয়টি মামলায়, দুদক দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ধারা ৫(২) এর অধীনে ফৌজদারি অভিযোগ এনেছে। এর মধ্যে বিশ্বাসভঙ্গ এবং প্রতারণাসহ আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে।

হাসিনা ও তার পরিবারের ছয় সদস্য ছাড়াও আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সাবেক সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার এবং কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার এবং সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার।

আরও রয়েছেন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম এবং নায়েব আলী শরীফ; বর্তমান পরিচালক কামরুল ইসলাম; সাবেক উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান সবুজ, শেখ শাহিনুল ইসলাম এবং সাবেক সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম ও ফারিয়া সুলতানা।

মামলার নথি অনুযায়ী, শরীফ, সাইফুল, পূরবী, ওয়াছি, আনিছুর, খুরশীদ, নাসির ও শামসুদ্দিন হাসিনার সঙ্গে ছয়টি মামলার সবকটিরই আসামি। আসামিদের মধ্যে খুরশীদ আলম এখন কারাগারে।