দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্যিকারের অগ্রগতি হয়েছিল বিএনপির আমলে: তারেক রহমান
বাংলাদেশে দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক রেকর্ড একমাত্র বিএনপিরই আছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, দুর্নীতি কীভাবে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছে, তা বুঝতে দূরে যাওয়ার দরকার নেই। মেধার ভিত্তিতে চাকরি খুঁজতে বের হওয়া গ্র্যাজুয়েট, সরকারি সেবা পেতে হিমশিম খাওয়া কৃষক কিংবা হাসপাতালে ভোগান্তিতে পড়া মানুষদের দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট হয়। তিনি বলেন, খাবারের দাম বৃদ্ধি, মানসম্মত শিক্ষার অভাব কিংবা সড়কে নিরাপত্তাহীনতা—সবকিছুর পেছনেই রয়েছে দুর্নীতি।
বিএনপির আমলে দুর্নীতি দমনে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, 'বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নতুন নয়, এটা বহু যুগের আলোচনার বিষয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস আমাদের সেই লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, আর মনে করিয়ে দেয় সেই সময়টাও, যখন বাংলাদেশ সত্যিকারের অগ্রগতি করেছিল। আর সেই সময়টা এসেছে মূলত বিএনপির আমলে।'
তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজে হাত দিয়েছিলেন, যাতে করে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার কমেছিল। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আধুনিকায়ন শুরু হয়। এর মধ্যে ২০০৪ সালে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠন ছিল সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি একে বাংলাদেশের জবাবদিহির ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেছিল।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জরিপের বরাত দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল এবং মানুষ নিজেরাই বলেছিল যে দুর্নীতি কমেছে। এটা কোনো গল্প নয়, এটা তখনকার সংস্কারের প্রমাণ।
স্ট্যাটাসে তারেক রহমান বিএনপি আমলের চারটি বড় পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো—শক্তিশালী অর্থ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছ ক্রয় নীতি, উন্মুক্ত বাজার এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ।
আগামী দিনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরও জোরালো করতে বিএনপির পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে—আদালত, দুদক, ইসির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, উন্মুক্ত দরপত্র ও সম্পদ বিবরণীর, শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইন, রিয়েল টাইম অডিটের মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনা, বিচার ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার সংস্কার, ই-গভর্ন্যান্স চালু করা, হুইসলব্লোয়ার বা তথ্য ফাঁসকারীদের সুরক্ষা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সততার চর্চা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা, এবং শক্তিশালী আর্থিক নজরদারি।
তারেক রহমান বলেন, 'বহু বছর অব্যবস্থাপনার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই অবশ্যই কঠিন হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসই প্রমাণ করে, যখন সৎ নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও জনগণের সমর্থন একসাথে আসে, তখন পরিবর্তন অসম্ভব নয়। জনগণ যদি দায়িত্ব দেয়, বিএনপি আবারও সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।'