‘তুমি যে আমার ওগো’ অমর প্রেমের গানের কণ্ঠশিল্পী গীতা দত্ত

জাহিদ আকবর
জাহিদ আকবর
23 November 2020, 10:09 AM
UPDATED 23 November 2020, 16:12 PM

গীতা দত্তের কণ্ঠের অমর গান ‘সাগরিকা’ সিনেমার ‘তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার’। গানটি এখনো শ্রোতাদের মনের মধ্যে দোলা দিয়ে যায়। এ ছাড়া, ‘নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশে’ কিংবা ‘এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়’— গানগুলো কখনো মুছে যাবে না। অনেক বছর পেরিয়েও গানগুলো মানুষের হৃদয়ে অনুরণন তুলবে। বাংলা ও হিন্দি গানের এক অবিস্মরণীয় নাম গীতা দত্ত।

১৯৩০ সালের ২৩ নভেম্বর ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন গীতা দত্ত। শচীন দেববর্মণ গীতা দত্তের কিশোর বয়সেই গানের গলা শুনে খুশি হয়ে বলেছিলেন, ‘এই মাইয়্যার জন্মই তো হইছে ফিল্মে গাওয়ার জন্য।’ প্রথম গান রেকর্ডিংয়েই তিনি বলেছিলেন, ‘এইখানে বাঙালির সুনাম অনেক, গান গায়া তোর মান রাখতে হবে’। গীতা দত্ত সেই মান রেখেছিলেন। অল্প কয়েক বছরেই তিনি হয়ে গেলেন বোম্বের শীর্ষস্থানীয় গায়িকা।

শচীন দেববর্মণের সুরে মোট ৭২টি গান গেয়েছিলেন গীতা দত্ত। এর মধ্যে ৪৩টি ছিল একক কণ্ঠের গান। বিখ্যাত সুরকার ওপি নাইয়ার আশা ভোঁসলেকে বলতেন, ‘গীতার মতো গলাটা বানাও।’

১৯৫১ সালে শচীন দেববর্মণের সুরে ‘বাজি’ চলচ্চিত্রে গাওয়া গানই গীতা দত্তের সংগীতজীবনে নতুন মোড় নিয়ে আসে।

সিনেমা সূত্রেই পরিচয় হওয়া গুরু দত্তের সঙ্গে প্রেম শুরু হয় গীতা দত্তের। তাকে তখন যে দেখত, বলত, সিনেমার নায়িকা হতে পার ইচ্ছা করলে। কিন্তু, নায়িকা হতে চাননি গীতা দত্ত। হতে চেয়েছেন সিনেমা পরিচালক গুরু দত্তের সহযাত্রী। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাদের বিয়ে হলো। গুরু দত্ত ছাড়া অন্যের সিনেমায় গান গাইতেন না। তখনি লতা মঙ্গেশকরের উত্থান শুরু হয়

নায়িকা ওয়াহিদা রেহমানের সঙ্গে গুরু দত্তের প্রেমের গুঞ্জন। গান কমিয়ে গীতা দত্তের তখন একমাত্র সাথী মদ। খুব বেশি আসক্ত ছিলেন মদে। তার কিছুদিন পরেই গুরু দত্ত আত্মহত্যা করেছেন। ভেঙে পড়েন গীতা দত্ত। অর্থনৈতিকভাবে বিপযর্স্ত হয়ে পড়া গীতা দত্তকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রচুর শোয়ের ব্যবস্থা করে দিতেন। কিংবদন্তি এই শিল্পীকে নচিকেতা ঘোষ আর হেমন্ত ছাড়া আর কেউই সুযোগ দেয়নি।

কবি কাইফি আজমীর কথায় ‘ওয়াক্ত নে কিয়া’ গান তখন সারা পৃথিবীর অবসাদ ছুঁয়ে থাকে। তনুজার কণ্ঠে গীতা দত্তের শেষ দিকের গান, ‘মুঝে জান না কাহো মেরি জান’— এইসব চিরন্তন আবেগ নিয়েই তো আমাদের জীবন। গীতা দত্ত ১৯৭২ সালের ২০ জুলাই মাত্র ৪১ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন।