আবু তালেবের ড্রাগন সাফল্য

এস দিলীপ রায়
এস দিলীপ রায়
24 June 2021, 10:02 AM
UPDATED 24 June 2021, 16:20 PM

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকেও ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন লালমনিরহাটের আদিতমারীর কুমড়িহাট গ্রামের আবু তালেব (৩৮)। নিজের ৬৫ শতাংশ জমিতে দুই হাজার ৫২টি ড্রাগনের চারা লাগান। এতে তার খরচ হয় পাঁচ লাখের বেশি টাকা। আট মাস পর তার ড্রাগন বাগানে ফলন আসে। এর মধ্যে বাগান থেকে ১০ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রিও করেছেন তিনি।

আবু তালেব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি আশা করছি এ বছর আমার বাগানে ৮-১০ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করতে পারব। বাগান থেকেই প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। তবে বাগানে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেও লাভবান হওয়া যায়। একটি গাছ থেকে ১২-১৫ কেজি ড্রাগন ফল পাওয়া যায়।’

dragon2.jpg
নিজের ড্রাগন ফলের বাগানে আবু তালেব। ছবি: এস দিলীপ রায়

লালমনিরহাটে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল উৎপাদনকারী আবু তালেব আরও বলেন, ‘আমি ইউটিউবে ড্রাগন ফলের চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হই। যে আশা নিয়ে ড্রাগনের চাষ শুরু করে তার চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছি। প্রথম দিকে অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকায় বাড়তি খরচ করতে হয়েছিল। তবে, এখন আমি দক্ষতা অর্জন করেছি।’

আবু তালেব তার ড্রাগন বাগানে ফলের পাশাপাশি চারাও উৎপাদন করছেন। ইতোমধ্যে দুই হাজার চারা উৎপাদন করেছেন এবং প্রতিটি চার ৫০ টাকা দরে বিক্রিও করেছেন। আরও দশ হাজার ড্রাগনের চারা উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।

dragon3.jpg
আবু তালেবের বাগান থেকে বিক্রি হচ্ছে ড্রাগন ফল। ছবি: এস দিলীপ রায়

তিনি স্থানীয় শিক্ষিত তরুণদের মাঝে ড্রাগন ফল চাষের আগ্রহ তৈরি করছেন। আগ্রহীরা তার কাছ থেকে চারা নিয়ে বাগানও করছেন। তবে, আবু তালেব শুধু চারা বিক্রি করেন না চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দেন।

স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (৪৫) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি জানুয়ারিতে আবু তালেবের কাছ থেকে ড্রাগনের ১০০টি চারা কিনে রোপণ করেন। তার কাছ থেকেই ড্রাগনের চাষ পদ্ধতি জেনেছেন। আবু তালেবের মতো সফল হলে বড় পরিসরে ড্রাগনের চাষ শুরু করবেন।

এই কৃষক বলেন, ‘ড্রাগন ফল চাষে দীর্ঘমেয়াদী মোটা অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়। এটাই আমাদের প্রধান সমস্যা।’

dragon1.jpg
নিজের ৬৫ শতাংশ জমিতে দুই হাজার ৫২টি ড্রাগনের চারা লাগান আবু তালেব। ছবি: এস দিলীপ রায়

একই গ্রামের জোবেদ আলী (৩২) জানান, ড্রাগন চাষে আবু তালেবের সফলতা দেখে তিনিও আগ্রহী হয়েছেন। ১৫০টি চারা কিনে রোপণ করেছেন এবং আরও চারা লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘বাজারে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদা আছে। এ ফলের উৎপাদন আশানুরূপ হলে লাভবানও হওয়া যায়।’

আবু তালেব বলেন, ‘ড্রাগন ফল চাষে রাসায়নিক সারের ব্যবহার মোটেই উচিৎ নয়। সম্পূর্ণ জৈব সারের ব্যবহার করেই এ ফল উৎপন্ন করতে হবে। শুধু নিয়মিতভাবে পরিচর্যা করতে পারলেই ড্রাগনের ফলন আশানুরূপ হবে। আমার ড্রাগন বাগানের পাশে ১০০ শতাংশের একটি জমি লিজ নিয়েছি। সেখানে চলতি বছরে পাঁচ হাজার ড্রাগনের চারা লাগাবো। ড্রাগনের চারা একবার লাগাতে পারলে কমপক্ষে ২০ বছর এ বাগান থেকে আয় করা সম্ভব।’

dragon5.jpg
নিজের বাগানের ড্রাগন ফল কাটছেন আবু তালেব। ছবি: এস দিলীপ রায়

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামিম আশরাফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এখন অনেক কৃষক ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। ইতোমধ্যেই অনেকে এ ফলের চাষ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগ থেকেও তাদের অনুপ্রেরণা ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ড্রাগন ফল চাষে শুধু দরকার উঁচু জমি যেখানে কখনোই পানি জমাট বাঁধে না। আর দরকার সময় মতো সঠিক পরিচর্যা। ড্রাগন ফল চাষে বেশি বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়। এ কারণে অনেক কৃষকের আগ্রহ থাকলেও চাষ করতে পারছেন না।’