বন্যায় ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২১
গত এক সপ্তাহের ভয়াবহ বন্যায় ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩২১ জনে।
আজ শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
মালাক্কা প্রণালিতে সৃষ্ট বিরল উষ্ণমণ্ডলীয় ঝড়ের প্রভাবে গত এক সপ্তাহ ধরে ঘূর্ণিঝড়-সৃষ্ট প্রবল বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত হয়েছে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৬ জন।
ইন্দোনেশিয়া
এই সপ্তাহের বন্যা ও ভূমিধসে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭৪-এ দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা। এখনো প্রায় ৮০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
দেশটির জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন সংস্থা (বিএনপিবি)-এর প্রধান সুহারিয়ান্তো জানান, 'আজ বিকেল পর্যন্ত আমরা উত্তর সুমাত্রা প্রদেশজুড়ে মোট ১১৬ জনের মৃত্যু রেকর্ড করেছি। আরও ৪২ জনকে এখনো খোঁজা হচ্ছে।'
তিনি বলেন, দ্বীপের আচেহ প্রদেশে আরও ৩৫ জন এবং পশ্চিম সুমাত্রায় আরও ২৩ জন নিহত হয়েছেন।
বৃষ্টি থামলেও ৭৯ জন এখনো নিখোঁজ এবং হাজারো পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানান তিনি।
সুমাত্রার পাদাং পারিয়ামান এলাকায় বন্যার পানির উচ্চতা দাঁড়ায় অন্তত ১ মিটার (৩.৩ ফুট)। ওই এলাকায় ২২ জন মারা গেছেন। শুক্রবার পর্যন্তও উদ্ধারকর্মীরা অনেক এলাকায় পৌঁছাতে পারেনি।
পশ্চিম সুমাত্রার ৫৩ বছর বয়সী বাসিন্দা মিসনিয়াতি এএফপিকে বলেন, 'সকালে মসজিদে নামাজ পড়ে ফেরার সময়ই খেয়াল করলাম রাস্তায় পানি উঠেছে। আমি দৌড়ে বাড়িতে গিয়ে স্বামীকে বলব ভেবেছিলাম আর তখন পানি আমার কোমর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বাড়ি পৌঁছানোর সময় তা আমার বুক পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল।'
থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডের দক্ষিণের আটটি প্রদেশে ১৪৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। এ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন দেশটির প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ।
বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতি হওয়া অঞ্চল দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর হাত ইয়াই-তে শুক্রবার অবশেষে বৃষ্টি থেমেছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন শহরটিতে এখনো গোড়ালি-সমান পানি।
হাত ইয়াই- এর এক বাসিন্দা রয়টার্সকে জানান, বন্যায় তিনি 'সবকিছু হারিয়েছেন'।
৫২ বছর বয়সি সোমপর্ন পেচতাই বলেন, 'এটা আমাদের সবকিছুতেই প্রভাব ফেলেছে। আমার বাসায় পানি ঢোকেনি কিন্তু আমি এমনভাবে আটকে ছিলাম যেন কোনো দ্বীপে আছি।'
মালয়েশিয়া
গতকাল মধ্যরাতে মালয়েশিয়ার স্থলভাগে আঘাত হানে ক্রান্তীয় ঝড় সেনইয়ার। এতে দেশটিতে অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করা গেছে।
ঝড়টি এরপর থেকে দুর্বল হয়ে পড়লেও আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ এখনো ভারি বৃষ্টি ও প্রবল বাতাসের আশঙ্কা করছে। ছোট নৌকাগুলোর জন্য উত্তাল সাগর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেছে।
দেশটিতে এখনো মোট ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। ঝড়ের শঙ্কায় গত বৃহস্পতিবার আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ।
শুক্রবার মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, থাইল্যান্ডে বন্যাকবলিত ২৫টিরও বেশি হোটেলে আটকে পড়া ১ হাজার ৪৫৯ জন মালয়েশিয়ান নাগরিককে এরই মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় এখনো আটকে থাকা বাকি ৩০০ জনকে উদ্ধার করার কাজ চলবে।
ঝড়-বৃষ্টির প্রভাব কমে আসায় তিনটি দেশেই উদ্ধারকাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। বিমানযোগে উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণের ব্যবস্থা করছে দেশগুলো।