আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপে লাভ হয় না, পণ্যের দাম নির্ধারণ নিয়ে গভর্নর
বাজার নিয়ন্ত্রণে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার সমালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, 'এই যে ব্যুরোক্রেটিক ইন্টারভেনশন যেটা হয়, আমি মনে করি যে, এটা আমাদের জন্য কাউন্টার প্রডাক্টিভ।'
তিনি বলেন, 'এতে কোনো লাভ হয় না। আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে বাজারকে কীভাবে মনিটরিং করা যায়, বাজারকে কীভাবে আমরা আরও বেশি সচল করতে পারি।'
পণ্য ভিত্তিক সরবরাহ পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, 'সরবরাহটা যেন সচল থাকে।'
আজ শনিবার ঢাকায় চতুর্থ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
সুদের হার বেশি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গভর্নর বলেন, 'আমাদের মূল্যস্ফীতি যখন ছিল সাড়ে ১২ শতাংশ, আগস্ট মাসে যখন আমি যোগদান করি, সেই প্রেক্ষাপটে পলিসি রেট ১০ শতাংশ কি বেশি? না। পৃথিবীর অন্যান্য সব দেশে যখন আমরা দেখি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি দেখি, ভারতেও দেখি পলিসি রেটের সঙ্গে ইনফ্লেশনের ডিফারেনশিয়াল অন্তত আড়াই থেকে তিন শতাংশ—এর নিচে হয় না। আমরাও সেটাকে টার্গেট করছি। তাহলে আমাকে এখন কোথায় থাকতে হবে? আমার ইনফ্লেশন রেট এখনো আট দশমিক দুই, এটা বা এর নিচে গেলেই আমি ইন্টারেস্ট রেট কমিয়ে আনবো—কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু একটু ধৈর্য ধরতে হবে।'
'হয়তো আমরা সাতের ঘরে চলে যেতে পারতাম। এখানে কিছু পলিসি ফেইলিওর আছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, শুধুমাত্র চালের যে দাম বৃদ্ধি হয়েছে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে—১৮ শতাংশ। সেটার কারণে আমাদের মূল্যস্ফীতি এক দশমিক চার শতাংশ বেশি হয়েছে, অর্থাৎ আমার যেটা এখন আট, সেটা কিন্তু সাত বা সাতের নিচেও নামতে পারে। নামেনি কারণ আমাদের চালের দাম অনেক বেশি,' বলেন তিনি।
মনসুর আরও বলেন, 'পৃথিবীতে তো চালের দাম বাড়ে নাই! ভারতে তো চালের দাম বাড়ে নাই। আমরা তো বন্ধ করে রেখেছি ট্রেড। একটা জিনিস বুঝতে হবে, মূল্যস্ফীতিকে আমি যদি কমাতে চাই, আমাকে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। আমি যদি আমদানি বন্ধ করে রাখি, তাহলে আমার দাম বেড়ে যাবে, পৃথিবীর অন্য দেশে দাম কমলেও আমার কিছু আসে-যায় না। কারণ আমি তো (আমদানি) বন্ধ করে রেখেছি! আমরা পরে খুললাম কিন্তু সেটা অনেক দেরি করে। আবার সেটা আমন মৌসুমের একটু আগে।'
ভোজ্য পণ্যের দাম ঠিক করে দেওয়ার সমালোচনা করে মনসুর বলেন, 'আমাদের একটা প্রবণতা আছে যে, দাম ঠিক করে দিচ্ছি সরকার থেকে। ওই দামে কি কিছু পাওয়া যায়? না। কিন্তু দাম ঠিক করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় যেটা হয়, বাজার থেকে হঠাৎ করে ভোজ্য তেল উধাও হয়ে যায়। কিছু দিন বন্ধ থাকে। আবার নতুন করে দাম বাড়িয়ে সরকার থেকে সেটাকে চালু করা হয়। কী দরকার আছে? তার চেয়ে আমরা এটা খোলাই রাখি, সরবরাহটা ঠিক থাকবে।'
সুদের হার কমবে আশাবাদ ব্যক্ত করে গভর্নর বলেন, 'এখানে কতগুলো প্রেসার আসছে। আমার ডিপোজিট রেট নেমে গেছিল ছয় শতাংশে, এখন সেটা বেড়েছে কিন্তু ১০ শতাংশ। এটা আরও বাড়বে, একটু ধৈর্য ধরতে হবে। এই ছয় শতাংশ থেকে গত বছর সরকার নিয়েছে এক লাখ কোটি টাকা। আমার ঋণযোগ্য তহবিল হচ্ছে ২০ লাখ কোটি টাকা, ছয় শতাংশ হচ্ছে এক লাখ ২০ হাজার, সরকারই নিচ্ছে এক লাখ কোটি টাকা—থাকবে কী?'
সরকার যতদিন পর্যন্ত ঋণ চাহিদা না কমাতে পারবে, মানি মার্কেটের টেনশন কমবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।