কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় আইডিয়া নাকি স্কেল?

রকিবুল হাসান
রকিবুল হাসান
2 December 2025, 11:51 AM
UPDATED 2 December 2025, 17:57 PM
‘ব্যাপারটা অনেকটাই সেই শিক্ষার্থীর মতো, যে বই মুখস্থ করে ফেলেছে, কিন্তু বাস্তব জীবনে একটা সহজ কাজ করতে গিয়ে ঘাবড়ে যায়।’

ইলিয়া সুতস্কেভারের নতুন পডকাস্টটা শুনে আমার মনে হলো, আমরা আসলে এক অদ্ভুত রূপান্তরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি বললেন, আমরা নাকি 'স্কেলিংয়ের যুগ' থেকে বের হয়ে 'রিসার্চের যুগে' ঢুকছি।

কথাটা শুনতে সহজ। কিন্তু, একজন সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে এগুলো বুঝতে গেলে আমাদের একটু সহজভাবে ভাবতে হবে।

সুতস্কেভার বললেন, ২০১২–২০২০ ছিল রিসার্চের যুগ, আর ২০২০–২০২৫ ছিল স্কেলিংয়ের যুগ। মানে, আমরা তখন নতুন আইডিয়া বের করেছি, আর পরে সেই আইডিয়াকে বড় বড় ডেটা আর কম্পিউটে স্কেল করেছি।

কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে, প্রি-ট্রেইনিংয়ের ডেটা তো সীমিত। শুধু স্কেল বাড়ালে আর ম্যাজিক হবে না। ভাবুন, একটা গাড়িকে আপনি বারবার পেট্রল, অকটেন দিয়ে তার স্পিড আপ করলেন, কিন্তু ইঞ্জিনটাই যদি পুরনো থাকে, তাহলে গতি বাড়বে কতটুকু?

আরেকটা জায়গায় তিনি বললেন, এখনকার মডেলগুলো পিএইচডি টেস্ট পাস করতে পারে, কিন্তু ছোট্ট একটা কোড বাগে গিয়ে আটকে যায়। ব্যাপারটা অনেকটাই সেই শিক্ষার্থীর মতো, যে বই মুখস্থ করে ফেলেছে, কিন্তু বাস্তব জীবনে একটা সহজ কাজ করতে গিয়ে ঘাবড়ে যায়।

সুতস্কেভারের মতে, এই বিষয়টাই প্রমাণ করে যে আমরা এখনকার এআই দিয়ে আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এজিআই) বানাতে পারব না। শুধু বড় মডেল বানালেই হবে না, শেখার পদ্ধতিটাই বদলাতে হবে। এটা কিন্তু একটা বড় বিষয়। এ কারণেই আমি শিক্ষা নিয়ে পড়ে আছি এতো বছর ধরে।

এখানে একটা মজার তুলনা দিলেন তিনি। একজন কিশোর বা কিশোরীর গাড়ি চালানো শিকতে লাগে ১০ ঘণ্টায়। কিন্তু একটা মডেলকে শেখাতে লাগে মিলিয়ন-লেভেলের ডেটা। মানে, মানুষের লার্নিং অ্যালগরিদম এখনকার মডেলের চেয়ে অনেক এগিয়ে। মানুষ রিওয়ার্ড, ইমোশন, ভুল-শুদ্ধ মিলিয়ে শেখে, আর মডেল শেখে শুধু রিওয়ার্ড সিগন্যাল দিয়ে। এই পার্থক্যটাই একদিন বিশাল গ্যাপ তৈরি করবে।

সুতস্কেভারের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল, বড় বড় সাফল্য কখনো স্কেল দিয়ে শুরু হয়নি। অ্যালেক্সনেট তৈরি হয়েছিল দুটি জিপিইউতে। ট্রান্সফর্মার বানানো হয়েছিল ৮–৬৪ জিপিইউতে। মানে ব্রেক থ্রু আগে আসে, স্কেল পরে আসে।

তিনি বললেন, এখন আমরা একটা সীমার কাছে পৌঁছে গেছি। এখান থেকে নতুন পথ খুলবে আইডিয়া দিয়ে, নতুন শেখার পদ্ধতিতে—শুধু কম্পিউট বাড়িয়ে নয়।

আমার বিশ্বাস, এ কথাগুলো আমাদের দেশের সিস্টেম-ডিজাইন বা অটোমেশন ভাবনায়ও প্রযোজ্য। আমরা অনেক সময় ভাবি, 'আরও টাকা ঢালি, আরও সার্ভার দেই, আরও মানুষ নিই', কিন্তু মূল পদ্ধতিতে যদি ভুল হয়, তাহলে স্কেল দিয়েও সমাধান হয় না।

যেমন ধরুন, একটা অফিসে ফাইল গায়েব হয়ে যায়। এখন আপনি লোক বাড়াবেন নাকি প্রক্রিয়া বদলাবেন? সুতস্কেভারের বক্তব্য ঠিক এইটাই—সঠিক আইডিয়া ছাড়া স্কেলিং অর্থহীন।

তিনি আরেকটা ভালো কথা বলেছেন। ভবিষ্যতের এআইকে নিজের ভুল ধরতে হবে, নিজেই নিজেকে সমালোচনা করতে পারতে হবে। আমাদের মতোই, যেভাবে আমরা ভুল করলে বুকের ভেতর খচখচ করে, মডেলগুলোকেও জানতে হবে তারা ভুল করছে কখন।

সব মিলিয়ে সুতস্কেভারের কথাটা খুব সোজা—এজিআই আসবে না শুধু বড় মডেল বানিয়ে, আসবে তখনই যখন আমরা এআইকে শেখাবো কীভাবে মানুষের মতো সাধারণীকরণ করতে হয়, কীভাবে কম উদাহরণে শিখতে হয়।


রকিবুল হাসান; টেলিকম, অটোমেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক লেখক এবং লিংক-থ্রি টেকনোলজিস লিমিটেডের চিফ টেকনোলজি অফিসার