যে মানুষটিকে ঘিরে ‘প্যাডম্যান’-এর গল্প

By স্টার অনলাইন রিপোর্ট
13 February 2018, 04:48 AM
UPDATED 13 February 2018, 11:08 AM

এমন দিন এসেছিলো তাঁর জীবনে যখন টাকার অভাবে পড়ালেখাটাই বন্ধ হয়ে যায়। এমনও দিন এসেছিলো যখন নতুন স্ত্রীকে একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে দিতে পারেননি তিনি। সেসব আজ ইতিহাস।

যে ব্যক্তির জীবনে এমন ঘটনা ঘটেছিলো তিনি স্বল্প-শিক্ষিত হলেও তাঁকে এখন অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে হয়। সেদিনের সেই দরিদ্র ব্যক্তিটি এখন একজন সুপ্রতিষ্ঠিত সামাজিক উদ্যোক্তা।

তিনি অরুণাচলম মুরুগানানথাম। ভারতের তামিলনাড়ুর এই অধিবাসীর নাম তাঁর দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৪ সালে টাইম ম্যাগাজিনে বিশ্বের ১০০জন সেরা প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় উঠেছিলো তাঁর নাম। বলিউড অভিনেত্রী ও প্রযোজক টুইঙ্কেল খান্নার ‘দ্য লিজেন্ড অব লক্ষ্মী প্রসাদ’ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁর কথা। এরপর, তাঁর জীবনকাহিনি নিয়েই বলিউডে তৈরি হয়েছে ‘প্যাডম্যান’ চলচ্চিত্র। আর বালকি পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করেছেন অক্ষয় কুমার, সোনম কাপুর ও রাধিকা আপ্তে।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর তিনি তা দেখেন। আর দেখার পর আনন্দাশ্রু চোখে নিয়ে অরুণাচলম গণমাধ্যমকে বলেন, “আমার জীবনের সংগ্রাম, নানান সমস্যা, জীবনের আনন্দ-দুঃখগুলো আমার চোখের সামনে বড় পর্দায় এক এক করে ভেসে উঠছিলো। আমার জীবন-সংগ্রাম নিয়ে এর চেয়ে ভালো কাজ- আমি আর কী আশা করতে পারি!”

১৯৬২ সালে তামিলনাড়ুতে জন্ম দেওয়া এই ব্যক্তিটিই গত ২০ বছর ধরে নীরবে-নিভৃতে বিপ্লব করেছেন ভারতের মাটিতে। তাঁর ২৯ বছর বয়সে তিনি প্রথম স্যানিটারি ন্যাপকিন হাতে দেখেছিলেন। আর ভেবেছিলেন, বিদেশিরা এটি কতো টাকা দিয়ে বিক্রি করে!

অরুণাচলমের মনে পড়ে প্রথম যেদিন তাঁর স্ত্রীর হাতে এক টুকরো ময়লা কাপড় দেখেছিলেন সেদিনের কথা। তাঁর মতে, এমন ময়লা কাপড় দিয়ে তিনি তাঁর মোটরসাইকেলটিও মুছবেন না। সেদিন অবাক চোখে স্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন। আর স্ত্রীর উত্তর ছিলো, “তা তোমার জানার দরকার নেই।”

আজ এই অরুণাচলম সবচেয়ে কম দামে স্বাস্থ্যকর স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। সেদিন স্ত্রীর মুখে “তোমার জানার দরকার নেই” শুনে অদম্য আগ্রহ চেপেছিলো এই মানুষটির মনে। এরপর, তিনি তৈরি করেন বিশ্বের প্রথম কম খরচের স্যানিটারি প্যাড বানানোর যন্ত্র। সেদিন এর মাধ্যমেই নব-বধূর মন জয় করার একটি উপায় খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি।

রসিকতা করে অরুণাচলম বলেন, “আমার আবিষ্কারের প্রথম ‘গিনিপিগ’ ছিলেন আমার স্ত্রী।” অর্থাৎ, তাঁর কারখানা থেকে উৎপাদিত প্রথম ন্যাপকিন তিনি তাঁর স্ত্রীকে দিয়েছিলেন পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্যে।

এরপর অরুণাচলমের গভীর রসিকতা, “একজন স্বল্পশিক্ষিত মানুষ হয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে আমি যদি ইতিবাচকভাবে ভাবতে পারি, সমাজে অবদান রাখতে পারি, তাহলে উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা আসলে সমাজের জন্যে কী করছেন?”