ভারতের ৬৫তম জাতীয় পুরস্কার গ্রহণের অনুষ্ঠান ঘিরে বিতর্ক

By কলকাতা প্রতিনিধি
3 May 2018, 10:41 AM
UPDATED 3 May 2018, 16:52 PM

ভারতের ৬৫তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণের অনুষ্ঠান ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ আজ (৩ মে) সন্ধ্যায় এই জাতীয় পুরস্কার দেবেন। কিন্তু, ওই অনুষ্ঠানে তিনি মাত্র এক ঘণ্টা সময় থাকবেন। আর সে কারণে দেড় শতাধিক জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তের জায়গায় মাত্র ১১ জনকে নিজের হাতে জাতীয় পুরস্কার তুলে দিতে পারবেন রাষ্ট্রপতি।

ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী স্মৃতি ইরানী বাকিদের হাতে জাতীয় পুরস্কার তুলে দেবেন বলে গতকাল সরকারিভাবে জানানো হয়েছিল। আর এই ঘোষণার পর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ৬০ জন রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠান বয়কট করার ঘোষণা করেছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো এমন তথ্য প্রকাশ করছে।

গত ৬৪ বছরে কোনও বছরই জাতীয় পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেনি। এটি অসম্মানের বলে মনে করছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্তরা। তাঁদের দাবি, শেষ মুহূর্তে এই বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘ময়ূরাক্ষী’-র পরিচালক অতনু ঘোষ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, “এটি সত্যিই কষ্টের। মাত্র ১১ জনের হাতে জাতীয় পুরস্কার তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি। বাকিরা কোথায় যাবেন?” এর প্রতিবাদে অনেকের সঙ্গে সহমত পোষণ করে তিনিও রাষ্ট্রপতির জাতীয় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান বয়কট করছেন বলে জানান।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘নগর-কীর্তন’-এর পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় জানান, “এই ঘটনা আমরা ভালোভাবে নিচ্ছি না। কেননা, ভারতের জাতীয় পুরস্কার রাষ্ট্রপতি নিজের হাতে তুলে দেবেন এটিই রীতি। আর প্রত্যেকের আমন্ত্রণপত্রে পরিষ্কারভাবে লেখা রয়েছে, রাষ্ট্রপতি নিজের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেবেন। মাত্র ১১ জনের হাতে পুরস্কার দিলে বাকিরা কি তবে রাজনৈতিক দলের মন্ত্রীদের হাত থেকে এই জাতীয় সম্মান নেবেন- এটি হতে পারে না।”

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত খুদে অভিনেতা ঋদ্ধি সেন জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যায় যখন রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানের রিহার্সাল হচ্ছিল, তখনই এই তথ্যটি তাদের জানানো হয়। যদিও রাষ্ট্রপতি তার হাতে এই পুরস্কার দেবেন বলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক ঋদ্ধি সেনকে নিশ্চিত করেছে। কিন্তু এই শিশু অভিনেতাও মনে করেন রাষ্ট্রপতি সবার হাতে এই পুরস্কারটা তুলে দেবেন সেটি এই জাতীয় সম্মান প্রাপক প্রত্যেকেই আশা করেন। এটি না হলে সত্যিই তা অসম্মানের ঘটনাই ঘটবে। ঋদ্ধি সেন ছাড়াও অস্কারজয়ী সংগীতপরিচালক এআর রহমান এবং প্রয়াত শ্রীদেবী ও বিনোদ খান্নার নামের পুরস্কারগুলোও নিজের হাতে দেবেন রাষ্ট্রপতি। এমনটিও জানানো হয়।

এদিকে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব অশোক মালিক এই বিতর্কের বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি কোনও সমাবর্তন কিংবা জাতীয় অনুষ্ঠানে এক ঘণ্টার বেশি সময় থাকেন না। সেই তথ্য ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক জানে বলেও দাবি করেন অশোক মালিক।

পশ্চিমবঙ্গের আরেক প্রখ্যাত পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মনে করেন, এই পুরস্কার সবাই রাষ্ট্রপতির হাত থেকেই নিতে চাইবেন এটিই স্বাভাবিক। এমনটি না হলে সবাই তা মেনে নেবেন কেন?

সংগীতশিল্পী অনুপম রায় বলেন, “রাষ্ট্রপতি অরাজনৈতিক মুখ। আর মন্ত্রীরা রাজনৈতিক। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্তরা সবাই অরাজনৈতিক ব্যক্তির কাছ থেকেই জাতীয় পুরস্কার নেবেন। এটিই স্বাভাবিক। এমনটি না হওয়ার কারণটা সত্যিই রহস্যজনক।”