জ্যান্ত সাপ নিয়ে অভিনয় করতে গিয়ে ছোবলে অভিনেত্রীর মৃত্যু

By কলকাতা প্রতিনিধি
10 May 2018, 11:26 AM
UPDATED 10 May 2018, 17:48 PM

জ্যান্ত সাপ নিয়ে অভিনয় করতে গিয়ে বিষধর সাপের ছোবলেই মৃত্যু হলো একজন প্রবীণ যাত্রা অভিনেত্রীর। গতকাল (৯ মে) রাতে মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনার হাসনাবাদ বরুণহাটে।

উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, মৃত অভিনেত্রীর নাম কালিদাসী মণ্ডল (৬৩)। সাপুড়ে দয়াল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে না গিয়ে বরং নিজেই অভিনেত্রীকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে ভালো করার চেষ্টা করেছিলেন। ফলে, সেই অভিনেত্রীর মৃত্যু হয়।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, বুধবার রাতে উত্তর চব্বিশ পরগনার হাসনাবাদের বরুণহাটে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী ও বাড়ির মালিক মনোরঞ্জন দাসের বাড়িতে মনসা পূজা উপলক্ষে যাত্রাপালার এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই জ্যান্ত বিষধর সাপ হাতে জড়িয়ে অভিনয় করছিলেন অভিনেত্রী কালিদাসি মণ্ডল। মনসা পূজা উপলক্ষে গ্রামবাংলার চিরাচরিত যাত্রাপালা মনসামঙ্গল মঞ্চস্থ করতে গিয়েছিলেন কালিদাসি মণ্ডল। আর সেখানেই হাতে পেঁচিয়ে রাখা সাপের ছোবলে মারা গিয়েছেন অভিনেত্রী।

মনোরঞ্জন দাস জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে মনসা পূজা হয় বহু বছর ধরে। এ উপলক্ষে সেখানে চলে যাত্রাপালাও। এতদিন প্লাস্টিকের সাপ নিয়েই অভিনয় করতেন কালিদাসী মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, দর্শকদের চমক দিতে কালিদাসী মণ্ডল নিজেই এবার হাড়োয়া থেকে সাপ এবং তাঁর সঙ্গে সাপুড়ে দয়াল বিশ্বাসকেও নিয়ে এসেছিলেন।

সাপের কামড় দেওয়ার পর দয়াল বিশ্বাস দাবি করেন তিনিই ঝাড়ফুঁক দিয়ে সারিয়ে তুলতে পারবেন অভিনেত্রী কালিদাসীকে।

চার ঘণ্টা ধরে এটা-সেটাও করেন তিনি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় মানুষ শেষ পর্যন্ত তাঁকে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসকরা জানান, অনেক আগেই মারা গিয়েছেন ওই বছর বর্ষীয়ান যাত্রাশিল্পী।

১০ মে (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে কলকাতার গণমাধ্যমে এই ঘটনা প্রচারিত হওয়ার ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়। পুলিশ পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বসিরহাটের হাড়োয়া শালিপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই সাপুড়েকে গ্রেফতার করে।

বসিরহাট মহকুমা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পেরেছেন যে, পনেরো বছর ধরে সাপের খেলা দেখান তিনি। কিন্তু, কখনও এরকম ঘটনা ঘটেনি। যে সাপের কামড় খেয়েছিলেন ওই অভিনেত্রী, সেই সাপের বিষদাঁতও নাকি ভাঙ্গা ছিল।

পুলিশের আরও দাবি, সাপুড়ের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া জ্যান্ত সাপ দুটি পশ্চিমবঙ্গ বন-দপ্তরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।