একদা এখানে পাহাড় ছিল

মিন্টু দেশোয়ারা
মিন্টু দেশোয়ারা
11 February 2022, 07:48 AM
UPDATED 11 February 2022, 14:08 PM

একসময় হবিগঞ্জের রূপাইছড়া সরকারি পাহাড় প্রায় ৫০০ ফুট উঁচু ছিল। কিন্তু, মাটি বিক্রি ও গাছ কাটার কারণে এখন তা বিলুপ্তির পথে।

সম্প্রতি বাহুবল উপজেলার রূপাইছড়া রাবার গার্ডেনে সরেজমিনে দেখা গেছে- ইতোমধ্যে গাছসহ পশ্চিম ও উত্তরের ২টি পাহাড় কাটা হয়েছে। এতে প্রায় ১৯ একর রাবার বাগানও শেষ হয়ে গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধভাবে পাহাড় কাটা, মাটি ও বালি উত্তোলনের পেছনে একটি প্রভাবশালী মহল কাজ করেছে। যাদের পেছনে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার পৃষ্ঠপোষকতা আছে।

এদিকে, পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসন নীরব পর্যবেক্ষক ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

mintu2.jpg
ইতোমধ্যে গাছসহ পশ্চিম ও উত্তরের ২টি পাহাড় কাটা হয়েছে। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

রূপাইছড়া রাবার গার্ডেন কর্তৃপক্ষ জানায়, বাগানটির মোট আয়তন ১ হাজার ৯৬৩ একর। দেশে ১৭টি সরকারি মালিকানাধীন রাবার বাগান আছে। যার মধ্যে ৪টি সিলেট বিভাগে এবং তাদের অন্যতম হবিগঞ্জের রূপাইছড়া।

রাবার বাগান কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুটিজুরী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও হবিগঞ্জ জেলা তাঁতি লীগের সভাপতি মো. মুদ্দাত আলী বাগানের প্রায় ১৯ একর জমি দখল করে নিয়েছেন এবং আরও ৩ একর জমির মালিকানা দাবি করেছেন।

এ ছাড়াও, আরও কয়েকজন বালি ব্যবসায়ী বাগানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সোশানছড়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন।

রাবার বাগানের টিলার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, 'এখানের বাগান ও পাহাড়গুলো অরক্ষিত, কারণ কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। এমন পরিস্থিতিতে যারা বালি ও মাটি উত্তোলন এবং গাছ কাটতে চায় তারা আমাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। তা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ কখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।'

mintu3.jpg
প্রায় ১৯ একর রাবার বাগানও শেষ হয়ে গেছে। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দা সাদেক মিয়া অভিযোগ করেন, 'প্রতি রাতেই পাহাড় কাটা হচ্ছে। ৮ বিঘা একটি খেলার মাঠ, মাঠের পূর্ব দিকে একটি ১০ একর রাবার বাগানের নার্সারি এবং মুদ্দাত আলীর জমি ব্যবসার জন্য ১২ ফুট প্রশস্ত একটি রাস্তা ধ্বংস করা হয়েছে।'

এ বিষয়ে জানতে মুদ্দাত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'তার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি থেকে মাটি ও বালি উত্তোলন করা হয়েছে।'

বালু ও ভূমি ব্যবস্থাপনা আইনে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পাহাড় কাটা যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মাটি ও বালি উত্তোলনে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন আছে আমার।'

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন-২০১০ অনুযায়ী, পাহাড় কাটা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাকে পাহাড় কাটতে দেওয়া হয় না।

mintu4.jpg
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধভাবে পাহাড় কাটা, মাটি ও বালি উত্তোলনের পেছনে একটি প্রভাবশালী মহল কাজ করেছে। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের হবিগঞ্জ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, 'সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট জমির ২০ শতাংশ বনভূমি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। কিন্তু, অবাক করা ব্যাপার হলো প্রতি বছর সরকারি কর্মকর্তাদের সহায়তায় সরকারি পাহাড় কাটা হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'বন্যপ্রাণীদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আমাদের পাহাড়গুলো খুবই প্রয়োজন।'

রূপাইছড়া রাবার গার্ডেনের ব্যবস্থাপক আব্দুল বাকি স্বীকার করেছেন- সীমানা প্রাচীর ছাড়া বাগানটি অরক্ষিত। তিনি বলেন, 'মুদ্দাত আলী আমাদের বলেছিলেন- তিনি তার নিজের জমি থেকে মাটি ও বালি উত্তোলন করছেন। আমরা তদন্ত করে এ বিষয়ে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থান নেব।'