এন্ড্রু কিশোর যেদিন বুঝেছিলেন তিনি ‘জনপ্রিয়’

জাহিদ আকবর
জাহিদ আকবর
4 November 2025, 16:32 PM
UPDATED 5 November 2025, 11:24 AM

কিংবদন্তি প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের জন্মদিন ৪ নভেম্বর। ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বেঁচে থাকলে ৭০ পেরিয়ে ৭১ বছরে পা রাখতেন এই গুণি শিল্পী।

চার দশকের বেশি সময় ধরে বাংলা গানের জগতে রাজত্ব করেছেন তিনি। এই সময়কালে অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। 

২০১৬ সালে ঢাকার মিরপুর ১১ নাম্বারের বাসায় সারাদিন ধরে দ্য ডেইলি স্টারকে ভিডিও সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ওই দিন তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- আপনি যে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন, সেটা প্রথম কীভাবে বুঝলেন? 

জবাবে তিনি বলেছিলেন, 'রাজশাহীর এক গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে। সেখানে কেউ আমাদের চেনে না। আমরা গ্রামে ঘুরছিলাম। এক গ্রামবাসী আমার গাওয়া 'ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে' গানটা গাইতে গাইতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই প্রথম বুঝতে পারি- দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আমার কণ্ঠের গান।'

জনপ্রিয় অবস্থায় কেন বিদেশ সফর করতেন না? এমন প্রশ্নের উত্তরে এন্ড্রু কিশোর বলেছিলেন, 'যেসব সংগীত পরিচালক, প্রযোজক, পরিচালকদের কারণে এত খ্যাতি পাচ্ছি, তাদের এড়িয়ে কীভাবে বিদেশে যাওয়া যায়। আমার কারণে তাদের সিনেমার কাজ পিছিয়ে যাক, সমস্যা হোক, এটা কখনো চাইতাম না। সেই কারণে বিদেশ সফরে অনীহা ছিল।'

রাজশাহী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। তার পিতা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মাতা মিনু বাড়ৈ। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে রাজশাহীতে। সেখানেই গানের ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে 'সুরবাণী' গানের স্কুলে সংগীতের প্রাথমিক শিক্ষা নেন।

১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে 'মেইল ট্রেন' সিনেমায় 'অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ' গানটি দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন এন্ড্রু কিশোর। এরপর মুকুল চৌধুরীর কথায় ও আলম খানের সুরে 'এক চোর যায় চলে' গানের পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

বাংলা সিনেমায় সর্বাধিক ১৫ হাজার গানে প্লেব্যাক করেছেন। চলচ্চিত্রে তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় গান আর কারো নেই। এজন্য তিনি পেয়েছেন 'প্লেব্যাক সম্রাট' উপাধি।

তার গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- আমার সারা দেহ খেও গো মাটি, আমার বুকের মধ্যেখানে, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার গরুর গাড়িতে, তোমায় দেখলে মনে হয়, পড়ে না চোখের পলক, প্রেমের সমাধি ভেঙে, সবাই তো ভালোবাসা চায়, ভালো আছি ভালো থেকো, ভালোবেসে গেলাম শুধু ভালোবাসা পেলাম না। 

এছাড়া বেদের মেয়ে জোসনা আমায়, তুমি ছিলে মেঘে ঢাকা চাঁদ, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমার মাঝে খুঁজে পেয়েছি, আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, তুমি আজ কথা দিয়েছো, কী যাদু করেছো বলো না, এক বিন্দু ভালোবাসা দাও ইত্যাদি গানগুলোও পায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর। ১৯৮২ সালে 'বড় ভালো লোক ছিল' সিনেমার 'হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস' গানের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় পুরস্কার পান। সৈয়দ শামসুল হকের কথায় গানটির সুরকার ছিলেন আলম খান। এরপর একে একে ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯) চলচ্চিত্রে 'আমি পথ চলি একা এই দুটি ছোট্ট হাতে', পদ্মা মেঘনা যমুনা (১৯৯১) সিনেমার 'দুঃখ বিনা হয় না সাধনা', কবুল (১৯৯৬) চলচ্চিত্রে 'এসো একবার দুজনে আবার', আজ গায়ে হলুদ (২০০০) সিনেমার 'চোখ যে মনের কথা বলে', সাজঘর (২০০৭) চলচ্চিত্রে 'সাজঘর', কী জাদু করিলা (২০০৮) চলচ্চিত্রের 'কী জাদু করিলা' গানের জন্য শ্রেষ্ঠ গায়ক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।

ভারতের খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক আর ডি বর্মণের সুরে 'সুরজ' সিনেমায় হিন্দি গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর। এ ছাড়া তার সুরে আরও দুটি বাংলা গান করেছেন। 

২০২০ সালের ৬ জুলাই থেমে যায় দেশের প্লেব্যাক সম্রাটের সুরেলা পথচলা।