শতবর্ষে সুরের সলিল

জাহিদ আকবর
জাহিদ আকবর
19 November 2025, 12:08 PM
UPDATED 19 November 2025, 19:18 PM

কিংবদন্তি সলিল চৌধুরীর নাম মনে আসতেই অনেকগুলো গানের কথা মনে আসে, যে গানগুলো কালজয়ী হয়ে আছে—'আমি ঝড়ের কাছে', 'আমায় প্রশ্ন করে,' 'উজ্জ্বল একঝাঁক পায়রা', 'ও মোর ময়না গো', 'আজ নয় গুনগুন', 'ও বাঁশী কেন', 'আলোর পথযাত্রী', 'কোনো এক গাঁয়ের বধূর কথা তোমায় শোনাই শোনো' ইত্যাদি।

অনবদ্য এমন অনেক স্মরণীয় গানের সুরকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। সুরকার, গীতিকার হিসেবে খ্যাতিমান হয়ে আছেন। তার গান এখনো প্রাসঙ্গিক চিরনতুন।

আজ এই সুরের জাদুকরের জন্ম শতবার্ষিকী।

সলিল চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার চিংড়িপোটা গ্রামে জন্ম নেন। তার সংগীত জীবনে ৭৫টি হিন্দি সিনেমা, ৪১টি বাংলা সিনেমায় সুরারোপ করেছেন।

প্রায় সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন তিনি। পশ্চিমা সংগীত ও ফিউশন করে সৃষ্টিকে প্রসারিত করেছিলেন। কিন্তু বাঙালি লোকসংগীতের যোগ বজায় রেখেছিলেন আজীবন।

সলিল-লতা জুটির বাংলা গান

সলিল চৌধুরীর সুরে লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে প্রতিটা গান কালজয়ী হয়ে আছে। সেই গানের মধ্যে রয়েছে—'না মন লাগে না', 'বুঝবে না কেউ বুঝবে না', 'ওগো আর কিছু তো নয়', 'আমি চলতে চলতে', 'সাত ভাই চম্পা, 'না যেয়ো না', 'ও মোর ময়না গো', 'আজ নয় গুনগুন', 'ও বাঁশি কেন' গানগুলো।

হেমন্ত-সলিল জুটির গান

১৯৪৯ সালে সাধারণ মানুষের মুখে সলিল চৌধুরীর নাম ছড়িয়ে পড়ে যখন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় রেকর্ড করলেন 'কোনো এক গাঁয়ের বধূ'। এরপর 'অবাক পৃথিবী', 'রানার', 'ঠিকানা', 'পালকি চলে' ইত্যাদি কবিতাতে সুর সংযোজন করেন।

এই জুটির 'ধিতাং ধিতাং বোলে', 'পথে এবার নামো সাথি', 'শোনো কোনো একদিন', 'দুরন্ত ঘূর্ণির', 'আমি ঝড়ের কাছে', 'আমায় প্রশ্ন করে' ইত্যাদি গান জনপ্রিয় হয়।

হিন্দি সিনেমার গান

৫০ দশকে বাঙালি শ্রোতা যখন সলিল চৌধুরীর গান পছন্দ করতে শুরু করেছে, তখন সলিল পাড়ি দিলেন মুম্বাই। বিমল রায় পরিচালিত 'দো বিঘা জমিন' সিনেমায় সুরকার হিসেবে গান করলেন 'ধরতি কহে পুকারকে'। এরপর 'মধুমতী' সিনেমায় 'আজা রে পরদেশী', 'চড় গয়ি পাপি বিছুয়া', 'দিল তড়প তড়প কে কহে রহা হ্যায়', 'ঘড়ি ঘড়ি মেরা দিল ধড়কে', 'সুহানা সফর ঔর ইয়ে মৌসম হাসিন' গানের মতো দর্শকপ্রিয় গানগুলো তৈরি করেন। 'আনন্দ', 'ছায়া', 'পরখ', 'মেরে আপনে' ইত্যাদি সিনেমায় জনপ্রিয় হয়েছিল সলিল চৌধুরীর সুর।

আন্দোলন-গণসংগীতে সলিল

সলিল চৌধুরী কৃষক আন্দোলনে সক্রিয় কৃষকের হয়ে তৈরি করেছেন 'পৌষালি বাতাসে পাকা ধানের বাসে', 'আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দেব মেপে'। গণসংগীতের মধ্যে রয়েছে 'দেশ ভেসেছে বানের জলে'।

১৯৪৬ সালের নৌ বিদ্রোহ সমর্থনে সলিল লিখলেন 'ঢেউ উঠছে, কারা টুটছে'।

এ ছাড়া, অনেক আন্দোলনে সলিল গান বাঁধলেন, 'হেই সামালো ধান হো', 'মানবো না এ বন্ধনে', 'ও আলোর পথযাত্রী'। যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে 'বিচারপতি তোমার বিচার', 'ও আলোর পথযাত্রী', 'জন্মভূমি', 'হাতে মোদের কে দেবে', 'কোনো এক গাঁয়ের বধূ', 'কালো মেয়ে', 'তেলের শিশি ভাঙলো বলে' ও 'শান্তির গান'।

বরেণ্য সংগীত স্রষ্টা সলিল চৌধুরী ১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ৬৯ বছর বয়সে কলকাতায় জীবনের ওপারে পারি জমান।