সোনালী দিনের চির আধুনিক কণ্ঠশিল্পী মাহমুদূন্নবী

জাহিদ আকবর
জাহিদ আকবর
16 December 2025, 11:54 AM
UPDATED 17 December 2025, 14:04 PM

বাংলা গানের গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠশিল্পী মাহমুদূন্নবীর জন্মদিন ও মৃত্যুদিন ডিসেম্বরে। ১৯৩৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্মেছিলেন বাংলা গানের এই কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী। ১৯৯০ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রয়াত হন তিনি।

৬০ ও ৭০ দশকে তার কণ্ঠের প্রায় সব গান শ্রোতাদের মুখস্থ ছিল। কালজয়ী সেই সোনালী সময়ের একেকটা গান আজও মানুষের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।

গানগুলো বাংলা গানের শ্রোতাদের যুগ যুগ ধরে মাতিয়ে রেখেছে। সোনালী দিনের চির আধুনিক সেই গানগুলো আজও কোথাও বেজে উঠলে স্মৃতিকাতর করে তোলে। সেই কারণে গানগুলো যেন চির নতুন।

যেসব গানে অমর নাম

মাহমুদূন্নবী তার ভরাট সুরেলা কণ্ঠে যে গানগুলো গেয়েছেন, সেসব গানের কথা, সুর, গায়কীর নিবিড় বন্ধন অমর হয়ে আছে। শিল্পীর কণ্ঠে 'তুমি যে আমার কবিতা' গানটি প্রেমের অসামান্য এক সুরেলা উচ্চারণ। যারা এই গান শুনেছেন, গানের মাঝে হারিয়ে গেছেন।

তার কণ্ঠের অন্য গানগুলোর হলো 'প্রেমের নাম বেদনা', 'আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন', 'গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে', 'ও মেয়ের নাম দেব কী', 'আমি ছন্দহারা এক নদীর মতো ছুটে যাই', 'আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে', 'এক অন্তবিহীন স্বপ্ন ছিল', 'আমি তো আজ ভুলে গেছি সবই', 'সালাম পৃথিবী তোমাকে সালাম', 'সুরের ভুবনে আমি আজো পথচারী', 'বড় একা একা লাগে তুমি পাশে নেই বলে', 'এই স্বপ্ন ঘেরা দিন রাখবো ধরে', 'তুমি কখন এসে দাঁড়িয়ে আছো আমার অজান্তে'।

abahani.jpg
ফাহমিদা নবী। ছবি: সংগৃহীত

ফাহমিদা নবীর বয়ানে বাবা মাহমুদূন্নবী

বাবার সম্পর্কে জানতে চাইলে সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আব্বা আমার আয়না। আমি আমাকে দেখি সেই আয়নায়। আমার পরিবার—ভাইবোন, আম্মা, আমাদের সন্তানরা—এবং আমার বাবার শ্রোতারা প্রত্যেকে আমার আয়নার অংশ।'

'এই আয়নার আলোকে পথ চলার সাহস এক ধরনের ধৈর্য তৈরি করেছে। সেই ধৈর্যর মধ্যে আছে দেখার ও নেওয়ার ধারণ ক্ষমতা।'

'শুদ্ধতা যেখানে বিলীন, সেখানে কিসের সঙ্গে আপোষ? সঙ্গীতের সঙ্গে রুচিশীলতার যে সম্পর্ক তাতো আসলে স্নিগ্ধতা, সুদূর প্রসারী সুরের মোহ থাকে। তা নিয়ে তো ভাবনা নেই বর্তমানে! তাই সাহসী একটা আয়না আমাকে প্রতিনিয়ত বিশ্বাসের প্রতিশ্রুতি দেয়। গান হচ্ছে শোনার আর অনুভবের, দৌড়ানোর বা পিছিয়ে পড়ার নয়। হারানোর কিছু নয়।'

'একজন প্রিয় জনশ্রুত শিল্পী মাহমুদূন্নবী যুগে যুগে একবারই আসে, যাকে মানুষ ভালোবাসে সুরের অলংকরণ আর বিনয়ের কারণে। আজো প্রাণে ধারণ করে বলে, কত ভালো মানুষ ছিলেন, কত বড় বিনয়ী শিল্পী ছিলেন!'

'তার মতো সুরের রাজা আজ পর্যন্ত আর দেখলাম না! এটা আমার কথা নয়, শ্রোতার কথা। তখন তো গান দেখার বিষয় ছিল না! আমিও মনে করি গান শোনার বিষয় ছিল, আছে, থাকবে। এটা নিত্য নতুন কোনো কনটেন্ট নয়! তাই আয়নার গভীরে কোনো প্রতিযোগিতার দৌড়ে হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই।'

'আমি সেই আয়নার প্রতিবিম্বে দাঁড়িয়ে, আমার গানের প্রান্তে আজকের শিল্পচর্চার দেয়াল দেখি আর ভাবি—আজ একজন মাহমুদূন্নবী হয়ে ওঠার জন্য শিল্পী নেই, আছে তারকার ভিড়! তাই তো সেই কণ্ঠ এখনো নবীন, এখনো তারার মতো জ্বলজ্বলে এক আলোকবর্তিকা।'

'শ্রোতার ভালোবাসা ও সম্মান পাওয়া বিশাল অর্জন। ধন্যবাদ শ্রোতাদের, যাদের জন্য আব্বা অমর হয়ে আছেন। আব্বার জন্য দোয়া করবেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন, আমরা যেন তার সেই সম্মান ধরে রাখতে পারি।'

'আমার বাবার গাওয়া গানের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয়—"বড় একা একা লাগে", "তুমি কখন এসে", "এক অন্তবিহীন স্বপ্ন ছিল", "গানেরই খাতায়", "কে যেন আজ" গানগুলো।'