‘সততা, দায়বদ্ধতা, কাজের প্রতি ভালোবাসা—শুধু শিল্পী নয়, সবার জন্যই দরকার’

শাহ আলম সাজু
শাহ আলম সাজু
29 October 2025, 16:35 PM

নব্বই দশকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন শাবনাজ। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম পরিচালিত 'চাঁদনী' সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়েই চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। প্রথম সিনেমাতেই সহ-অভিনেতা হিসেবে পেয়েছিলেন নাঈমকে, যিনি পরবর্তীতে তার জীবনসঙ্গী হয়। নাঈমেরও অভিষেক ঘটেছিল একই সিনেমার মধ্য দিয়ে। এই সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয়ের পর দুজনকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আপামর দর্শক লুফে নিয়েছিল শাবনাজ-নাঈম জুটিকে।

'আঞ্জুমান', 'আশা ভালবাসা', 'মায়ের অধিকার'—চলচ্চিত্রে সালমান শাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছিলেন শাবনাজ। অভিনয়ের গুণে পেয়েছেন অগণিত মানুষের ভালোবাসা।

আজ ২৯ অক্টোবর শাবনাজের জন্মদিন। ১৯ বছর আগে এই প্রতিবেদক এক শীতের বিকেলে শাবনাজের উত্তরার বাসায় যান। ডেইলি স্টারের পাঠকদের জন্য সেদিনের কিছু স্মৃতিমধুর অভিজ্ঞতার কথাই রইল।

সেদিন ছিল শীতের বিকেল। গিয়েছিলাম শাবনাজের উত্তরার বাসায়। বাসায় ঢুকে ড্রয়িংরুমে বসতেই বারবার একটি কথা মনে হতে থাকল, তা হলো, স্কুলজীবনে প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে কিনা এই নায়িকারই 'চাঁদনী' সিনেমার টিকিট কেটেছিলাম। পরবর্তীতে হলে টিকিট কেটে তার অভিনীত আরও অনেক সিনেমা দেখার সুযোগ হয়েছিল। ভাবছিলাম সেসব কথাই।

ভাবনা শেষ না হতেই ড্রয়িংরুমে আসেন শাবনাজ। মিষ্টি হাসি দিয়ে যেভাবে রুপালি পর্দার দর্শকদের জয় করেছেন, ঠিক তেমনই চিরচেনা হাসি তার মুখে। প্রথমেই বললেন 'কেমন আছেন? আসতে কষ্ট হয়েছে নিশ্চয়ই? হাজার হলেও জ্যামের শহর!' আমি হাসতে হাসতে বলি, 'না, না, তেমন জ্যাম পাইনি।'

আপ্যায়নের জন্য একে একে এলো চা, বিস্কিট ও মিষ্টি। বললেন, 'খেয়ে নিন। চা খেতে খেতেই আড্ডা শুরু করি।' আমিই প্রশ্ন করি 'শাবনাজ আপা, আপনি তো প্রথম সিনেমা দিয়েই সাড়া ফেলেছিলেন?'

মিষ্টি হাসি দিয়ে শাবনাজ বললেন, 'এটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখি। ভাগ্যও বলতে পারেন। কেননা, চাঁদনী সিনেমা সেই সময়ে সব শ্রেণির দর্শকরা গ্রহণ করেছিলেন। সবার ভালো লাগার মতোই একটি সিনেমা "চাঁদনী"। গল্প, নির্মাণ, সবার অভিনয়, লোকেশন—সবই ভালো ছিল। প্রথম সিনেমা দিয়ে সাড়া ফেলাকে ভাগ্যই বলব।'

'পরিচালক এহতেশাম তো একটা বড় বিষয়?' জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, 'নিশ্চয়ই। অনেক বড় মাপের পরিচালক তিনি। এদেশের সিনেমায় তার বিশাল অবদান। কাজেই, এমন একজন গুণী পরিচালকের সিনেমার প্রতি সবার আলাদা আগ্রহ ছিল। এরপর চাঁদনী মুক্তি পেল। সারাদেশে ঝড় তুলল। পরিচালক হিসেবে আমার তাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।'

'তারপর তো শাবনাজ-নাঈম জুটি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেল?' প্রশ্ন করতেই শাবনাজ বললেন, 'সত্যি কথা বলতে সেই সময় চাঁদনী মুক্তি পাওয়ার পরপরই দর্শকরা আমাদের জুটিকে গ্রহণ করেন। এদেশের সিনেমায় অনেক সফল জুটি এসেছে। দর্শকদের ভালোবাসায় সেসব জুটি সিক্ত হয়েছেন। তেমনিভাবে আমাদের জুটিও তারা ভালোবাসা দিয়ে সিক্ত করেছেন।'

জানতে চাই, 'একটা পরিচ্ছন্ন ইমেজ নিয়ে সিনেমায় এসেছেন আপনারা?' জবাবে তিনি বললেন, 'সততা, দায়বদ্ধতা, কাজের প্রতি ভালোবাসা—এসব শুধু শিল্পীর নয়, সবার জন্যই দরকার। পরিচ্ছন্ন ইমেজটাও দরকার।'

'সিনেমা থেকে দূরে থাকলেও মানুষের প্রবল ভালোবাসা পাচ্ছেন—কীভাবে দেখেন?' জানতে চাই আমি। জবাবে তিনি বললেন, 'খুবই ভালোভাবে দেখি। শিল্পী জীবনের বড় উপহার মানুষের ভালোবাসা পাওয়া। সবাই পায় না। এখনো মানুষের ভালোবাসা পাই। কাজের প্রশংসা করে। এগুলো অনেক বড় পাওয়া। এজন্য দর্শকদের কাছে কৃতজ্ঞতা।'

সময় গড়িয়ে যায়। আড্ডা চলতেই থাকে। ফেরার আগে জানতে চাই, 'সিনেমা থেকে দূরে এসে কেমন আছেন?'

শাবনাজ বললেন, 'ভালো আছি। অনেক ভালো আছি। দুই সন্তান, স্বামী, সংসার—সব মিলিয়ে ভালো আছি। সবার ভালোবাসা ও আশীর্বাদে ভালো আছি।'

বিদায় নিয়ে শাবনাজের বাসা থেকে বের হই এবং ছেলেবেলায় দেখা 'চাঁদনী' সিনেমার কথা ভাবতে ভাবতে রিকশা খুঁজি।

আজ 'চাঁদনী'-খ্যাত নায়িকা শাবনাজের জন্মদিনে তার প্রতি শুভেচ্ছা।