ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে অগ্রগতি, তবু ইউক্রেনের আপত্তি কোথায়?
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার পর কিয়েভের তীব্র আপত্তির ফলে আলোচনা একসময় অচলাবস্থায় ছিল।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯ দফায় নামানো সংশোধিত শান্তি প্রস্তাবে এবার ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে কিয়েভ। কিন্তু ভূখণ্ড ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা–সংক্রান্ত বিতর্ক এখনো পুরোপুরি কাটেনি।
এর মধ্যেই যুদ্ধ থামানোর প্রস্তাব নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠক এ সপ্তাহেই ডেকেছে কিয়েভ।
প্রাথমিক খসড়ায় ভূখণ্ড ও ন্যাটো ইস্যু নিয়ে ক্ষুব্ধ কিয়েভ
এপি নিউজ জানায়, প্রথম খসড়াটিতে ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া, ভবিষ্যতে ন্যাটোতে 'কখনোই' যোগ না দেওয়া এবং সেনাবাহিনী সীমিত করার কথা বলা হয়েছিল। যা মস্কোর দাবির সঙ্গে মিলে যায় বলে উল্লেখ করা হয়।
কিয়েভ বলছে, এসব শর্ত তাদের সার্বভৌমত্বে সরাসরি ক্ষুন্ন করবে। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফ্রন্টলাইনের এক ইউক্রেনীয় সেনা প্রস্তাবটিকে 'আবর্জনা' বলে উল্লেখ করেন।
জেলেনস্কির এক উপদেষ্টা এপিকে বলেন, ভূখণ্ডসংক্রান্ত প্রশ্ন 'অমীমাংসিত' এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়া কেউ নিতে পারেন না।
জেনেভা সলিউশনস জানায়, খসড়ার কিছু অংশ নাকি তৈরি করেছিলেন ক্রেমলিনঘনিষ্ঠ রুশ অর্থনীতিবিদ কিরিল দিমিত্রিভ। যা ইউক্রেনের সন্দেহ আরও বাড়ায়।
ট্রাম্পের চাপ ও ইউরোপের অস্বস্তি
প্রস্তাবটি দ্রুত স্বাক্ষরের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ কিয়েভ–ওয়াশিংটন সম্পর্ককে আরও টানটান করে তোলে।
এপি জানায়, এই 'হঠাৎ আরোপিত সময়সীমা' ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতাদের বিস্মিত করেছে। যুদ্ধ চলাকালে ভূখণ্ড ছাড়ার মতো সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে অসম্ভব হওয়ায় কিয়েভ এটিকে চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে দেখে।
পরবর্তীতে জেনেভার বৈঠকে প্রস্তাবের কাঠামো আংশিক সংশোধন করে ২৮ দফা কমিয়ে ১৯ দফায় আনা হয়।
হোয়াইট হাউস ও বিবিসির তথ্যানুযায়ী, নতুন কাঠামোয় ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও টেকসই শান্তিকে আরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, আলোচনায় 'দারুণ অগ্রগতি' হয়েছে।
এদিকে এবিসি নিউজ জানায়, জেনেভা বৈঠকের পরদিনই আবুধাবিতে মার্কিন সেনা সচিব ড্যান ড্রিসকল রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেন।
এই বৈঠক শান্তি প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহই নির্দেশ করে।
যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতায় আপত্তি আরও কঠোর
এপি রিপোর্ট অনুযায়ী, রুশ বাহিনী কুপিয়ানস্ক ও পোকরোভস্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং নভেম্বরের আক্রমণে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই অবনতিশীল পরিস্থিতিতে ভূখণ্ড ছাড়ার যেকোনো প্রস্তাব কিয়েভের কাছে আরও অগ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।
জেলেনস্কির এক উপদেষ্টা বলেন, 'নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো চুক্তি নয়'। অর্থাৎ ভবিষ্যৎ রুশ হামলা ঠেকাতে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়া ইউক্রেন কোনো সমঝোতায় যাবে না।
এর পাশাপাশি দেশটির ভেতরে জেলেনস্কি দলীয় বিদ্রোহ, ১০০ মিলিয়ন ডলারের দুর্নীতি কেলেঙ্কারি এবং সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ঝুঁকির চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই অবস্থায় তিনি আলোচনার প্রধান স্থপতি আন্দ্রিয়ি ইয়ারমাককে জেনেভা বৈঠকে পাঠান।
নতুন মোড়: সংশোধিত খসড়ায় 'সঠিক উপাদান' দেখছেন জেলেনস্কি
বিবিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থে থাকা কয়েকটি ধারা প্রত্যাখ্যান করার পর যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটির একটি সংশোধিত সংস্করণ তৈরি করে।
এই নতুন সংস্করণকে এবার 'স্বাগত' জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
টেলিগ্রামে তিনি লিখেছেন, 'অনেক সঠিক উপাদান এখন এ কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় যুদ্ধ শেষ করার আলোচনা করা যেতে পারে'।
অর্থাৎ আপত্তি থাকলেও কিয়েভ আলোচনার টেবিলে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্রও প্রস্তাবটিকে এমনভাবে সাজাচ্ছে যাতে উভয় পক্ষই আলোচনার পরবর্তী ধাপে যেতে পারে।