নেতানিয়াহুকে পশ্চিম তীর দখল করতে দেব না: ট্রাম্প

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
26 September 2025, 02:37 AM

বড়সড় এক বোমা ফাটিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমন এক কথা বলেছেন তিনি, যা শুনে তার প্রধান মিত্র ও ঘনিষ্ঠ 'বন্ধু' বেনিয়ামিন 'বিবি' নেতানিয়াহুর ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার কথা।

আজ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহুর ওই বক্তব্য সামনে রেখে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি মন্তব্য করেন, নেতানিয়াহুকে পশ্চিম তীরের দখল নেওয়ার অনুমতি দেবেন না তিনি।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ইসরায়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে উপস্থিত সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, 'আমি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখলে নিতে দেব না…এরকম কিছুই হবে না।'

'অনেক হয়েছে। এখন থেমে যাওয়ার সময় এসেছে', যোগ করেন তিনি।

আগামী সোমবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প আরও জানান, গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার চুক্তি 'চূড়ান্ত হওয়ার পথে।'

টাইমস অব ইসরায়েলকে এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, এ সপ্তাহের শুরুর দিকে ট্রাম্প প্রশাসন আলাদা করে ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখলের নেতিবাচক পরিণাম নিয়ে হুশিয়ারি দিয়েছে।

কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েলি প্রশাসন ওই হুশিয়ারিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে নেতানিয়াহু বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ছে

ইসরায়েল গাজার যুদ্ধ বন্ধ ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার জন্য ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী পশ্চিমা দেশ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে বৈধতা দেওয়ায় দেশটির ওপর চাপ অনেক বেড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে কট্টর ডানপন্থি ইসরায়েলিরা 'স্বাধীন ফিলিস্তিনের' ধারণাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে অধিকৃত পশ্চিম তীরকে দখল করে ইসরায়েলের মানচিত্রে যোগ করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন।

নেতানিয়াহুর জোট সরকারের উগ্র-জাতীয়তাবাদী সদস্যরা বারবার পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের অংশ করে নিতে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।

ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ও জার্মানি এ ধরনের উদ্যোগ না নিতে ইসরায়েলকে হুশিয়ারি দিয়েছে।

অপরদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সোমবার জাতিসংঘে বক্তব্য রাখার সময় উল্লেখ করেন, ইসরায়েলের এ ধরনের উদ্যোগ 'নৈতিক, আইনি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অসহনীয়' একটি কাজ বলে বিবেচিত হবে।

মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের হুশিয়ারি

এর আগে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ওভাল অফিসে গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি নেতানিয়াহু ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, 'গাজায় একটি চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পথে। হয়তো সেখানে শান্তিও প্রতিষ্ঠা পেতে পারে।'

বৃহস্পতিবার ভিডিও লিংকের মাধ্যমে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি জানান, তিনি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের জন্য ফ্রান্সের ঘোষণা দেওয়া শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

উল্লেখ্য, ফ্রান্স সোমবার ওই পরিকল্পনার ঘোষণা দেয়।

trump_arab_.jpg
আরব ও মুসলিম দেশের নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক। ছবি: জাতিসংঘ

নিউইয়র্কে সশরীরে এসে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি পাননি আব্বাস (৮৯)। ট্রাম্প প্রশাসন তাকে ভিসা দেয়নি। 

যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করে। দেশটির যুক্তি, এ ধরনের উদ্যোগ হামাসকে পুরষ্কার দেওয়ার সমতুল্য।

মঙ্গলবার ট্রাম্প জাতিসংঘের অধিবেশন চলার সময় গুরুত্বপূর্ণ আরব ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। তারা সকলেই ইসরায়েলের পশ্চিম তীর দখল করার পরিকল্পনার পরিণাম সম্পর্কে হুশিয়ারি দেন। 

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফয়সাল বিন ফারহান সাংবাদিকদের বলেন, 'আমার ধারণা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলের পশ্চিম তীর দখল করে নেওয়ার উদ্যোগের ঝুঁকি ও বিপদের বিষয়টি সম্পর্কে ভালো করেই জানেন।'

গাজায় ইসরায়েলের 'গণহত্যা' ও অন্যান্য অপরাধ

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস হামলা চালালে এক হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হন। সেদিনই গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যা আজ অবধি অব্যাহত আছে। ইসরায়েলের প্রতিশোধের আগুনে বলি হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫ হাজার ৪১৯ জন ফিলিস্তিনি। তাদের মধ্যে ১৮ হাজারেরও বেশি শিশু আছে। 

বিভিন্ন সময়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যার ফলে ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলমান।

বুধবার ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীর ও প্রতিবেশী দেশ জর্ডানের মধ্যে একমাত্র স্থল-সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে প্রায় বিশ লাখ ফিলিস্তিনি কার্যত বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ওই সীমান্তের কাছে দুই ইসরায়েলি সেনা এ জর্ডানিয় বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হওয়ার দুই দিন পর এই উদ্যোগ নেয় তেল আবিব।

Netanyahu
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স

বুধবার নারী ও শিশুসহ ৮০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।

স্থানীয় হাসপাতালগুলো জানায়, নিহতদের বেশিরভাগই গাজা সিটির বাসিন্দা।

আগস্টে জাতিসংঘের সংস্থা আইপিসি জানিয়েছে, গাজায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ 'ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও মৃত্যুর' মুখোমুখি অবস্থায় বিপর্যয়কর জীবনযাপন করছে। নেতানিয়াহু এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েল গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে 'বিকৃত ও মিথ্যা' বলে আখ্যা দেয়।

সব মিলিয়ে, গাজার যুদ্ধ ও পশ্চিম তীরের অধিগ্রহণ বন্ধে প্রবল চাপের মুখে আছে ইসরায়েল।