অটোপেন কী, বাইডেনের ক্ষমার আদেশ কি ট্রাম্প বাতিল করতে পারেন?

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
3 December 2025, 08:01 AM
UPDATED 3 December 2025, 14:19 PM

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আগের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অটোপেন বা স্বয়ংক্রিয় কলম ব্যবহার করে সই করা সব ক্ষমা ও শাস্তি কমানোর আদেশ বাতিল করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায়  জানান, যেকোনো নথি, ঘোষণাপত্র, নির্বাহী আদেশ বা চুক্তি যা বাইডেন অটোপেন দিয়ে সই করেছেন, তা এখন থেকে বাতিল। আইনিভাবে এসব আর কার্যকর হবে না।

তিনি আরও জানান, অটোপেনে সই করা ক্ষমা, শাস্তি কমানো বা অন্য আইনি নথি যারা পেয়েছেন, তাদের জানানো যাচ্ছে যে সেসব বাতিল করা হয়েছে, এবং সেগুলো আইনিভাবে আর কার্যকর নয়।

তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ আইন অনুযায়ী কার্যকর নয়। 

অটোপেন আসলে কী, বাইডেন কোন নথিগুলো অটোপেন দিয়ে সই করেছিলেন, কাদের ওপর এর প্রভাব পড়বে এবং ট্রাম্পের পদক্ষেপ আইন অনুযায়ী ঠিক কি না, এসব প্রশ্ন এখন সামনে আসছে।

অটোপেন কী?

অটোপেন হলো এমন একটি রোবোটিক যন্ত্র যা কালি ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তির সই হুবহু নকল করতে পারে। ১৮০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এর পেটেন্ট হয়েছিল। অটোপেন প্রায়শই বিশাল পরিমাণ নথি সই করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

২০০৫ সালে মার্কিন বিচার বিভাগের একটি নির্দেশিকা অনুসারে, প্রেসিডেন্টের নিজ হাতে কোনো বিলে সই করার প্রয়োজন নেই। যদি তিনি বিলটি অনুমোদন করেন এবং তাতে সই করার সিদ্ধান্ত নেন, তবুও সেটি আইনে পরিণত হবে। বরং প্রেসিডেন্ট একজন অধীনস্থ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়ে বিলে সই যুক্ত করতে পারেন। যেমন অটোপেনের মাধ্যমে।

বাইডেনই কি প্রথম অটোপেন ব্যবহারকারী?

পলিটিফ্যাক্টের মতে, বাইডেনই অটোপেন ব্যবহারকারী একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন। মার্কিন ইতিহাসের বেশিরভাগ সময়ে এই ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে এবং প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অটোপেনের ধরনও পরিবর্তিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন পলিগ্রাফ নামে পরিচিত একটি যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। এটি দুটি কলম নিয়ে তৈরি যন্ত্র, যেখানে দ্বিতীয় কলম প্রথম কলমের কাজ অনুলিপি করতে পারতো।

ষাটের দশকের শুরুতে জন এফ কেনেডি অটোপেনের আধুনিক সংস্করণ ব্যবহার করেছিলেন। বারাক ওবামাও কিছু সময় অটোপেন ব্যবহার করেন।

কোন কোন নথি বাইডেন অটোপেনে সই করেছিলেন?

ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, অটোপেন এমন একটি যন্ত্র এবং যার মাধ্যমে হাত ব্যবহার না করেই সই করা যায়। এর ব্যবহার জো বাইডেনের শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতারই প্রতিফলন।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, বাইডেন তার চার বছরের মেয়াদে রেকর্ড চার হাজার ২৪৫টি ক্ষমার আদেশে সই করেন। এই শতাব্দীতে এত ক্ষমার আদেশে আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট সই করেননি। 

এসবের বেশিরভাগই ছিল শাস্তি কমানোর আদেশ। বাইডেন চার বছরের মধ্যে কেবল ৮০ জনকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা করেছেন। তবে তিনি 'ঘোষণার মাধ্যমে ক্ষমা' করার জন্য বেশি পরিচিত ছিলেন, যা বহু মানুষের ওপর প্রভাব রেখেছিল।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সমকামী যৌনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের জন্য দোষী সাব্যস্ত সামরিক বাহিনীর সাবেক সদস্যদের ঘোষণার মাধ্যমে ক্ষমা, যা অবশ্য বাতিল হয়ে যায়। এর মধ্যে নির্দিষ্ট ফেডারেল মারিজুয়ানা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের ক্ষমাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
  
কিন্তু এটি স্পষ্ট নয়, ঠিক কতটি এবং কোন কোন ক্ষমা ও শাস্তি কমানোর আদেশ বাইডেন অটোপেনে সই করেছিলেন।

ট্রাম্পের পদক্ষেপ কি আইনগতভাবে বৈধ?

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সংবিধান আইন বিশেষজ্ঞ বার্নাডেট মিলার আল জাজিরাকে বলেন, আগের প্রেসিডেন্টের ক্ষমা বা শাস্তি কমানোর  আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা ট্রাম্পের নেই।

তিনি আল জাজিরাকে ইমেইলে বলেন, 'এই ঘোষণার কোনো আইনগত প্রভাব নেই। বাইডেন যেসব আইন বা ক্ষমার আদেশে অটোপেন দিয়ে সই করেছিলেন, সেগুলো বৈধই আছে। একমাত্র ব্যতিক্রম হলো কোনো নির্বাহী আদেশ, যা কেবল তখনই বাতিল হয় যখন সেটি একই বা অন্য প্রেসিডেন্ট বাতিল করেন।'

'সেসব নির্বাহী আদেশ ট্রাম্প বাতিল করতে পারেন। তাই সম্ভবত এই ঘোষণার মাধ্যমে সেই ধরনের আদেশ বাতিল হবে। কিন্তু ক্ষমা এবং আইনগুলো বৈধই থাকবে।'

পয়েন্টার ইনস্টিটিউটের ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট পলিটিফ্যাক্ট বলছে, যে ক্ষমা বাতিল করার জন্য কোনো সাংবিধানিক ব্যবস্থা নেই, এবং ১৮৬৯ সালের একটি আদালতের রায়ে বলা হয়েছে একবার ক্ষমা দেওয়া হলে তা চূড়ান্ত।

পলিটিফ্যাক্ট তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, ক্ষমায় অবশ্যই হাত দিয়ে সই করতে হবে কি না, তা মার্কিন সংবিধানেও উল্লেখ নেই ।

কাদের ওপর প্রভাব পড়বে? 

ট্রাম্প আগে বলেছিলেন, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে আক্রমণের ঘটনা তদন্ত করা সংসদ সদস্যদের যে 'আগাম ক্ষমা' বাইডেন করেছিলেন, সেগুলো ছিল অটোপেনে সই করা।

ট্রাম্প সমর্থকদের একটি দল বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কংগ্রেসে অনুমোদন পাওয়া থেকে বাধা দিতে ক্যাপিটল আক্রমণ করেছিল এবং বলেছিল ২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। অবশ্য ট্রাম্প ও তার সহযোগীরা নির্বাচনে বড় জালিয়াতির প্রমাণ দিতে পারেননি।

ট্রাম্প ও তার সহযোগীরা তদন্তকারী রিপাবলিকানদের বিশ্বাসঘাতক মনে করেন। এর মধ্যে ছিলেন লিজ চেনি ও অ্যাডাম কিনজিঙ্গারের মতো রিপাবলিকান সদস্যরা।

মার্চে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে জানান, এই সদস্যদের জন্য বাইডেনের ক্ষমার আদেশ 'বাতিল এবং আইনিভাবে কার্যকারিতাহীন, কারণ এগুলো অটোপেন দিয়ে সই করা হয়েছে।'