বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রাক্তনের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে

অনিন্দিতা চৌধুরী
অনিন্দিতা চৌধুরী
9 November 2025, 15:00 PM

একটি সম্পর্ক শুরু হয় অনেক আশা-ভরসা আর পরিকল্পনার জল্পনা-কল্পনা নিয়ে। আর দিনে দিনে তার সঙ্গে জড়াতে থাকে আমাদের বন্ধু-বান্ধব, পরিবার ও পরিপার্শ্ব। একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, আড্ডা দেওয়া, একে অন্যের আপদে-বিপদে পাশে থাকার মধ্য দিয়ে এই সম্পর্কগুলো কেমন যেন জাল ছড়ায় আমাদের জীবনে। বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গেও সম্পর্কগুলো এমনই। কখনো অম্লমধুর, কখনো ঈর্ষামিশ্রিত—আবার কখনো বা নিখাদ বন্ধুত্ব।

আসলে কার সঙ্গে কার জমে যাবে, সেটি কখনো আগে থেকে বোঝা যায় না। নিজের খুব কাছের বন্ধুটি যখন কাউকে মন দিয়ে ফেলে, তারই সঙ্গে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটায় আর যখন আপনার সঙ্গে থাকে, তখনো গল্পের অধিকাংশ বিষয়বস্তু সেই মানুষটিই হয়—তখন বোধহয় আপনি চাইলেও সেই নির্দিষ্ট মানুষটিকে এড়াতে পারবেন না। তা আপনার তাকে প্রথম থেকে পছন্দ হোক কিংবা না হোক।

বেস্ট ফ্রেন্ডের ব্রেকআপ বা বিচ্ছেদের পরে তার প্রাক্তনের সঙ্গে যে সম্ভাব্য সম্পর্কগুলো থাকতে পারে, তা মূলত নির্ভর করবে সেই প্রাক্তন ও আপনার মধ্যকার আগের সম্পর্কের ওপরেই।

দুজনেই যদি বন্ধু হয়

তিনজন বন্ধুর মধ্যে দুজন যখন প্রেম করে, তখনো তৃতীয় জনের জন্য ঝামেলা, আবার যখন সেই প্রেমে ভাটা পড়ে তারা ঢেউয়ের দুই পাড়ের মতো আলাদা হয়ে যায়, তখনো সে 'বাফার স্টেট'-এর মতো মাঝখানে পড়ে থাকে। অপর দু'জনের ভালো-মন্দ যাই হোক, এক্ষেত্রে ভোগান্তিটা নিঃসন্দেহে তৃতীয়জনের কপালে এসেই জোটে। তাই দুজনেই যদি বন্ধু হয়, তবে দুজনকে একসঙ্গে এনে একটি স্বাভাবিক বন্ধুত্বে ফেরত আসা যায় কি না—সেটি একবার চেষ্টা করে দেখুন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা খুব একটা সফল হয় না। এক্ষেত্রে দুজনের সঙ্গে আলাদাভাবে আপনার আগের বন্ধুত্বের ধরন অনুযায়ী মেশাটাই ভালো।

নাকি একজনকে বেছে নিতে হবে?

এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে খুঁজে বহু রাজা-বাদশা-উজির, এমনকি শেষের কবিতার অমিত রায়ও হয়রান হয়ে আছেন। তবে এক্ষেত্রে বিষয়টা ঠিক দ্বিপাক্ষিক প্রেম তো আর নয়, বলা যায় বেশ একটা দ্বিপাক্ষিক টানাটানি। আর এই টানাটানিতে অনেক বেশি 'মুই কী হনু রে' ভাবার আগে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার অপেক্ষা করুন। যার এ মুহূর্তে বেশি আপনাকে দরকার, তার সঙ্গে থাকার চেষ্টা করুন।

কোনো সম্পর্কই থাকবে না

যদিও আমরা ধরেই নিচ্ছি, বেস্ট ফ্রেন্ডের সঙ্গীর সঙ্গে নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তার সুযোগ রয়েছে—বাস্তবে এমনটা কিন্তু নাও হতে পারে। যদি চিত্রটা এমন হয় যে আদতে সেই ব্যক্তিটির সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট ভদ্রতার পর আপনার আর কখনো এগোনোই হয়নি, সেক্ষেত্রে তাদের দুজনের বিচ্ছেদের পর আপনার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকারই কথা না।

সম্পর্ক আরও খারাপ হবে

এমনও হতে পারে, আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রাক্তনকে আপনি দু চোখে দেখতে পারেন না। এতদিন বন্ধুর জন্যই দাঁতে দাঁত বুজে তাকে সহ্য করেছেন। সেক্ষেত্রে তাদের বিচ্ছেদে বন্ধুর জন্য খারাপ লাগলেও শেষমেশ আপনার বন্ধুর পিঠ চাপড়ে তাকে সান্ত্বনা দেওয়াটা আপনার জন্য খুব একটা কঠিন হওয়ার কথা না। ওদিকে দুজনে মিলে সেই প্রাক্তনকে ইচ্ছেমতো শাপ-শাপান্ত করাও খুব স্বাভাবিক একটি চিত্র। তাই চোখ বুজে বলে দেওয়া যায়, এক্ষেত্রে আপনাদের সম্পর্ক আরও খারাপ হবে।

বন্ধুর সঙ্গে খোলাখুলি কথা

তবে এই সম্পর্কটি শুধু 'বেস্টফ্রেন্ডের প্রাক্তন' না হয়ে যদি অন্য কোনো মাত্রায় ইতোমধ্যেই চলে যায়, তাহলে বন্ধুর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলার আর কোনো বিকল্প হয় না। কেননা, খুব স্বাভাবিকতা আপনার বন্ধুটির বিচ্ছেদের পর মানসিক অবস্থা খুব একটা ভালো নেই এবং সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে আপনার প্রতি তার কিছু চাওয়া-পাওয়া থাকবে। ব্যক্তিভেদে পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে, সে চাইবে আপনি তার পক্ষেই থাকবেন। আসলে আমাদের সমাজে একটি প্রেম বা বিয়ের সম্পর্ক যতটা না নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে শুরু হয়, তার চাইতে কয়েকগুণ বেশি নাটকীয়তা দেখা যায় বিচ্ছেদের দৃশ্যে। তাই প্রয়োজন থাক বা না থাক, দুই পক্ষের উদয় যে হবে—এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকা যায়; যদি না উভয়েই অনেক বেশি মানসিক পরিপক্বতার পরিচয় দিতে পারেন।

যে ধরনের সম্পর্ক বা যে ধরনের বিচ্ছেদই হোক না কেন, সবার আগে আপনার বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগটা স্পষ্ট ও খোলাখুলি কি না, সেটি নিশ্চিত করুন। একটি সফল যোগাযোগই পারে যেকোনো জটিলতা থেকে বের করে আনতে।