পুড়ে গেলে কী করবেন, কী করবেন না

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
12 November 2025, 10:55 AM
UPDATED 12 November 2025, 17:02 PM

আগুন, গরম পানি বা তেল, বাষ্প, গরম ধাতব বস্তু—এসবের সংস্পর্শে এসে অনেক সময় ত্বক পুড়ে যায়। ঘরে রান্নার সময়, কাপড় ইস্ত্রি করতে গিয়ে কিংবা বিদ্যুতের সংস্পর্শেও এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই কোনোভাবে পুড়ে গেলে কী করবেন, আর কী একেবারেই করবেন না—তা জানা খুবই জরুরি।

যা করবেন

পুড়ে যাওয়ার ধরন এবং তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী হাসপাতালে নিতে হবে। এ ব্যাপারে নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খান যেসব পরামর্শ দিয়েছেন—

১. প্রথম কাজ হলো আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত আগুন বা তাপের উৎস থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিন।

২. পোড়া স্থানে কমপক্ষে ২০ মিনিট স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ঢালুন অথবা পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। এটি ব্যথা ও পোড়ার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করবে।

৩. পোড়া স্থানে কাপড় বা গয়না (আংটি, চুরি, ঘড়ি ইত্যাদি) থাকলে সাবধানে খুলে ফেলুন। তবে পোড়া চামড়ার সঙ্গে কাপড় লেগে গেলে টানাটানি করবেন না—সাবধানে কেটে ফেলুন।

৪. ক্ষতস্থানে ধুলাবালি যেন না লাগে, সেজন্য পরিষ্কার, শুকনো গজ বা নরম কাপড়ে হালকা করে ঢেকে দিন।

৫. ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন খাওয়া যেতে পারে।  

৬. সংক্রমণ রোধে পোড়া স্থানে সিলভার সালফাডায়াজিন ১ শতাংশ ক্রিম লাগিয়ে গজ দিয়ে ঢেকে রাখুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৭. যদি ত্বকের রঙ কালচে হয়ে যায়, ফোসকা পড়ে বা চামড়া পুড়ে যায়, তাহলে দেরি না করে হাসপাতালে নিয়ে যান। থার্ড ডিগ্রি বার্ন বা তৃতীয় পর্যায়ের পোড়া হচ্ছে গুরুতর অবস্থা, এটি জরুরি চিকিৎসা ছাড়া বিপজ্জনক হতে পারে।

তবে পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে দগ্ধের পরিমাণ ১৫ শতাংশ বা তার বেশি হলে এবং অল্প বয়স্ক বা ১২ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে দগ্ধ স্থান ১০ শতাংশ বা তার বেশি হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

যা একেবারেই করবেন না

কুসংস্কার কিংবা ভুল ধারণা থেকে অনেক সময় এমন কিছু কাজ করা হয়, যা পুড়ে যাওয়া রোগীদের উল্টো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ ও বিভাগীয় প্রধান ডা. নুরুল আলম যেসব পরামর্শ দিয়েছেন—

১. অনেকে ঠান্ডা লাগানোর জন্য বরফ ব্যবহার করেন, কিন্তু এতে ত্বকের ক্ষতি আরও বাড়ে। তাই বরফ একেবারেই লাগাবেন না।

২. টুথপেস্ট, ডিম, তেল বা ভ্যাসলিন লাগাবেন না। এসব ঘরোয়া উপায় বরং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় এবং ক্ষতস্থানের আরোগ্য বিলম্বিত করে।

৩. ফোসকা ফাটাবেন না। ফোসকার ভেতরের তরল অংশ ক্ষতকে সুরক্ষা দেয়। সেটি ফাটালে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

৪. কাদা, চুন, ভেষজ বা অপরিষ্কার কিছু লাগাবেন না। প্রচলিত অনেক ভুল ধারণা আছে, যেমন—ঘাসপাতা বা কাদামাটি লাগানো। এসব থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।

পোড়া দুর্ঘটনা এড়াতে রান্নার সময় সতর্ক থাকুন। শিশুদের গরম বস্তু থেকে দূরে রাখুন এবং বিদ্যুতের কাজের সময় নিরাপত্তা নিয়ম মেনে চলুন। মনে রাখবেন—পোড়ার পর সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে পারে।