চিবুক ফুলে ব্যথা, টনসিল নাকি অন্যকিছু?
চিবুক ফুলে ব্যথা হয় অনেক সময়। সেটি টনসিল নাকি অন্য কোনো কারণে হয়, তা জানার জন্য আগে বুঝতে হবে চিবুক ফুলে কেন কিংবা ব্যথা হওয়ার পেছনেই বা কারণ কী?
এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবু হানিফ।
চিবুক ফুলে ব্যথা হওয়ার কারণ কী
চিবুক (চিন) হলো মুখের নিচের অংশ, যা নিচের ঠোঁটের ঠিক নিচে এবং চোয়ালের অগ্রভাগ নির্দেশ করে। এটি থুতনি নামেও পরিচিত। মূলত চোয়ালের হাড়ের (ম্যানডিবল) নিচের অংশটুকুই হচ্ছে চিবুক। সেখানে অনেকগুলো লিম্ফ নোড থাকে।
চিবুক ফুলে ব্যথা হওয়ার পেছনে এই লিম্ফ নোডগুলোর ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। এখন জানতে হবে লিম্ফ নোড কী এবং এর কাজ কী?
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন, লিম্ফ নোড বা লসিকা গ্রন্থি হচ্ছে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। লিম্ফ নোড শরীরকে সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য শরীরে প্রবেশ করা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু ফিল্টার করে ধ্বংস করে।
শরীরে প্রায় ৬'শ থেকে ৮'শ লিম্ফ নোড থাকে। তার মধ্যে প্রায় তিনশ লিম্ফ নোড থাকে গলায়, প্রতি পাশে দেড়শ করে। নাক, কান, গলা, শ্বাসনালীতে যদি কোনো রোগ হয়, যেমন: ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ক্যানসার, কোনো জীবাণু যাতে শরীরের অন্যান্য জায়গা ফুসফস, কিডনি, মস্তিষ্কে, ব্লাড স্টেমে যাতে সহজে প্রবেশ করতে না পারে, তার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে লিম্ফ নোডগুলো। আর সে কারণেই লিম্ফ নোডগুলো ফুলে যায় এবং ব্যথা হয় চিবুকে।
চিবুক ফুলে ব্যথা সরাসরি টনসিলের কারণে সাধারণত হয় না। যদি টনসিলে ইনফেকশন হয়, তাহলে সেই ইনফেকশনের যে রোগজীবাণু সেগুলো লসিকা গ্রন্থির মাধ্যমে গলার যে লিম্ফ নোড আছে সেখানে যায় রক্তের মধ্যে প্রবেশের জন্য। কিন্তু গলার লিম্ফ নোডগুলো রোগজীবাণুদের ফিল্টার করে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। ফলে লিম্ফ নোডগুলো ফুলে যায় এবং চিবুক ফুলে ব্যথা হয়। সুতরাং টনসিলে ইনফেকশন হলে গলা ফুলতে পারে ও ব্যথা হতে পারে।
এ ছাড়া জিহ্বা, দাঁত, মাড়ি, তালুর পশ্চাৎভাগ, নাক যেকোনো জায়গায় সংক্রমণ হলে লিম্ফ নোড ফুলে যায়, যার কারণে চিবুকে ব্যথা হয়।
তবে ক্যানসারের জন্য চিবুকের নিচে যে লিম্ফ নোডগুলো বড় হয়, সেগুলোতে ব্যথা হয় না বললেই চলে বা খুব কম হয়। এক্ষেত্রে লিম্ফ নোডগুলো ধীরে ধীরে বড় হয় এবং ফোলাভাব শক্ত হয়ে যায়।
চিবুক ফুলে ব্যথা যদি দুই থেকে তিন দিনে না কমে যায়, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

