বিকল্প এমপি প্রার্থীর পরিকল্পনা বিএনপির

সাজ্জাদ হোসেন
সাজ্জাদ হোসেন
28 October 2025, 04:56 AM
UPDATED 28 October 2025, 11:07 AM

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী রাখার বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হওয়ায় প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলে নমনীয়তা ও শক্তি দুটোই বাড়বে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'যদি কোনো প্রার্থীর মনোনয়ন আইনি কারণে বা অন্য কোনো কারণে বাতিল হয়, তাহলে বিকল্প প্রার্থীর দাঁড়ানোর সুযোগ থাকবে। এই কারণেই একাধিক প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।'

দলীয় নেতারা জানান, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনীত করেছিল, যাতে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করলেও বিএনপি প্রার্থীহীন না হয়ে যায়।

দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'দেশের প্রায় সব আসনেই একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তাই আমরা প্রতিটি আসনের যোগ্য প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।'

তার ভাষ্য, এসব বৈঠক দলীয় ঐক্য ও জাতীয় ঐক্য জোরদারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আয়োজিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিএনপি জাতীয় ঐক্যের চেতনায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করছে।

তিনি আরও বলেন, 'যেসব দলের সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম এবং এর বাইরেও অন্য দলগুলোর সঙ্গেও মিলে একটি বৃহত্তর জোট গঠনের চিন্তা করছি। যাতে নির্বাচনী বাধা একসঙ্গে মোকাবিলা করা যায়।'

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন এবং পরে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খুলনা ও সিলেট বিভাগের প্রার্থীদের সঙ্গেও যৌথ বৈঠক করেন।

নির্বাচনের আগে তারেক রহমান দলীয় নেতাদের যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ রাখতে দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার গুরুত্বও তুলে ধরেন।

তারেক রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে ঝিনাইদহ-৩ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী এ আর এম মামুন বলেন, 'আমাদের নেতার নির্দেশ হলো—বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকলেও তাদের সমর্থকদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।'

পিরোজপুর বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান জানান, তার জেলার তিনটি আসনের প্রায় ২০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী বৈঠকে অংশ নেন। তিনি নিজেও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

নজরুল বলেন, 'তারেক রহমান আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, মনোনয়ন পাওয়ার পর উল্লাস বা উদযাপন করা যাবে না এবং নির্বাচনের আগে এলাকায় কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাবে না।'

রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে বলে জানান রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু।

বরিশাল-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু বলেন, 'দলের বার্তা স্পষ্ট—ঐক্যবদ্ধ থাকুন। আমরা এক অন্ধকার গহ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই করছি এবং এই যুদ্ধে জয়ের জন্য তারেক রহমান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।'

ভোলা-৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আলমও একই মত প্রকাশ করেন।

দুটি বিভাগের সঙ্গে বৈঠক শেষে তারেক রহমান খুলনা ও সিলেট বিভাগের জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকটি চলে বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে পৌনে ৭টা পর্যন্ত।

সিলেট বিএনপির সভাপতি ও মনোনয়নপ্রত্যাশী আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, 'বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। দল আমাদের নির্দেশ দিয়েছে মনোনীত প্রার্থীর জন্য কাজ করতে।'

রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তারেক রহমান ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

তিনি জানান, সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিএনপির টিকিট পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের তালিকা শিগগির ঘোষণা করা হবে।

গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মনোনয়নপ্রত্যাশী শাহ রিয়াজুল হান্নান বলেন, 'আমাদের একগুঁয়েমিকে কেউ যেন সুযোগ হিসেবে নিতে না পারে, সেই বার্তাই দিয়েছেন তারেক রহমান।'

'বিএনপি একটি বৃহৎ দল, তাই মতভেদ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, ভবিষ্যতে দলের নেতাকর্মীদের জন্য আরও অনেক সুযোগ তৈরি হবে,' বলেন তিনি।