হাদির ঘটনা বিচ্ছিন্ন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়নি: সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা সংক্রান্ত যে প্রশ্ন উঠেছে, তার জবাবে আমি বলতে চাই, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের কোনো অবনতি হয়নি।
তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে, যেমন সম্প্রতি একটি ঘটনা ঘটেছে (হাদির ঘটনা)। কিন্তু এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যা আগেও ছিল।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর গুলশানে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সিইসি।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যেকোনো সংশয় ও দুশ্চিন্তা দূর করার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, 'আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলো কোথায়? একটু মাঝেমধ্যে দুই একটা খুন-খারাবি হয়। এই যে হাদির একটা ঘটনা হয়েছে, আমরা এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করি।'
অতীতেও দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা তো সবসময় ছিল। আগে আহসানউল্লাহ মাস্টারের সঙ্গেও এরকম হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা হয় বাংলাদেশে, এটা নতুন কিছু নয়।
নাসির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। বরং, আপনারা যদি গত ৫ আগস্ট বা ২৪—এর পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেন, তখন থানাগুলো অকার্যকর ছিল, পুলিশ স্টেশনও নড়ছিল না, সেই সময়ের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা এখন শান্তিতে চলাফেরা করতে পারছি, রাস্তায় চলাচল করতে পারছি, শান্তিতে ঘুমাতে পারছি।
সিইসি বলেন, মিডিয়াসহ বিভিন্ন মহলে নির্বাচন নিয়ে কিছু আশঙ্কা হয়তো আছে, তবে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই— নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই। আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তা হবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সবার সহযোগিতা নিয়ে।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের মাথায় যত ধরনের দুশ্চিন্তাই আসুক না কেন, আমি অনুরোধ করব, সেই দুশ্চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। আমরা সবাই মিলে প্রস্তুতি নিই, যেন একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারি।
সিইসি বলেন, আমরা গতকাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। আমাদের বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তারা নিশ্চিত করেছে যে নির্বাচনের সময় পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনে তারা সক্ষম।
তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, নির্বাচন সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে, একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। জাতিকে আমরা যে ওয়াদা দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন তা পরিপালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেব।
নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা পেছনে ফিরে যাইনি। এখন তরুণদের ওপর ভর করে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা আশা করি, আমাদের পরবর্তী নির্বাচন হবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। দেশের বিশেষ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ যখন আমি দেখি, তখন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আমি আরও বেশি উৎসাহিত বোধ করি।
সিইসি বলেন, আমি বারবার বলে থাকি, এই নির্বাচন একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন। কারণ এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আমরা ডাকযোগে (পোস্টাল ব্যালট) আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের আওতায় এনেছি। গত ৫৪ বছর ধরে যা হয়নি, এবার আমরা সেটা করছি। এবার আমরা প্রায় ১০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ যারা ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকেন, তারা কোনোদিন ভোট দিতে পারতেন না। আমরা এবার তাদেরও ভোটের ব্যবস্থা করছি—পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে। কারাবন্দিদের জন্য ভোটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, প্রবাসীদের জন্য করা হচ্ছে, এবং যে সরকারি কর্মচারীরা নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে আছেন, তাদের জন্যও ভোটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সর্বোপরি, এইবার একটি গণভোটও একসাথে অনুষ্ঠিত হতে হবে। এসব দিক থেকে এটি নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। আমরা যে সাহস করে এই পথে নেমে পড়েছি, আমাদের এই সাহসী পদক্ষেপের সঙ্গে যদি আপনাদের সবার, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের, অংশগ্রহণ থাকে—ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হব।
একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন একা সফল হতে পারে না। সবাইকে নিয়েই আমরা এটি করব, বলেন সিইসি।