‘কাম না কইরলে কাই হামাক খাবার দিবে’

এস দিলীপ রায়
এস দিলীপ রায়
22 January 2023, 04:56 AM
UPDATED 22 January 2023, 11:11 AM

সময় সকাল ৮টা। চারদিক ঢেকে আছে ঘন কুয়াশায়। রাস্তায় পথচারীর তেমন দেখা নেই, দেখা যাচ্ছে না যানবাহনও। এখনো হয়তো অনেকে বিছানা থেকেই উঠেননি। কিন্তু কৃষকরা মাঠে কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

অনেক কৃষক সকাল ৬টা থেকে মাঠে কাজ করছেন। কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশা তাদের থামাতে পারেনি তাদের জীবনযাত্রা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট এলাকার কৃষক আবদার হোসেন (৫৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ও স্ত্রী হামিদা বেগম ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছি। হামিদা ঘরের কাজ করছেন। সকাল ৬টায় কোদাল হাতে নিয়ে মাঠে এসেছি। জমির মাটি কেটে সমান করছি। এ সপ্তাহেই জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে হবে।'

'হামাকতো কাম করা নাইকবে। কাম না কইরলে কাই হামাক খাবার দিবে,' যোগ করেন তিনি।

আবদার হোসেনের ১০ বিঘা জমির ৩ বিঘায় ভুট্টা চাষ করেছেন। বাকি জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণের প্রস্তুতি নিয়েছেন। সংসারে স্ত্রী ছাড়া তার ৩ ছেলে আছে। কৃষিকাজ তাদের জীবিকার একমাত্র উৎস।

আবতার হোসেন আরও বলেন, 'ঠান্ডার দিন আইসলে হামার এ্যাকনা কষ্টই হয়। ঠান্ডাত কাবু হয়া ঘরোত বসি থাইকলে জমির কাজ কাই কইরবে। এই ঠান্ডাত তো লেবারও পাওয়া যায় না।'

আক্ষেপ করে বলেন, 'হামরাগুলা চাষি মানুষ। হামার ঠান্ডা নাই। হামরাগুলা কষ্টকরি জমিত কাজ কইরমো ফসল ফলামো এটাই হামার কাম।'

একই গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে সকাল ৭টা থেকে জমিতে কাজ করছি। প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে জৈবসার নিয়ে এসে জমিতে ফেলছি।'

তিনি জানান, তার ৬ বিঘা জমির এক বিঘায় শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন। বাকি জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'ঠান্ডাত যদি হামরা বসি থাকি তাকহইলে আর বোরো ধান গারা হবার নয়। ঠান্ডাত হামার কষ্ট হয় তাং হামরা সাত সকালোত জমিত য্যায় কাজ করি।'

দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'হামরা হইলোং চাষি মানুষ। ঠান্ডার ভয়োত হামরা যতি ঘরোত শুতি থাকি তাকহইলে জমিত ফসল ফলাইবে কাই। কাই দ্যাশের জইন্যে খাবার ফলাইবে। হামাকগুলাকে এ কাজ করা নাইকবে।'

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার গ্রামের কৃষক নরেশ চন্দ্র দাস (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বয়স হয়েছে তবুও খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে জমিতে এসেছি। কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশা দমিয়ে রাখতে পারে না।'

'এ্যালা ঠান্ডা জইন্যে লেবার পাওয়া যায় না। হামাক তো নিজের কাম করা নাইকবে। মুই খুব সকালে জমিত আইসি কাম করো। মাঝে মধ্যে মোর বউও আইসে। কামের বেলা হামার কোন আলসিয়া নাই,' যোগ করেন তিনি।

বলেন, 'মোর ১১ বিঘা জমি মুই এ্যাকলায় সামাল দ্যাং। জমিত সবজি নাগাইছোং, ধান নাগাইছোং। এ্যালাং ৪ বিঘা জমি ফাঁকা পড়ি আছে। এই জমিতও ধান নাগাইম।'

এই গ্রামের কৃষি শ্রমিক জহুরুল ইসলাম (৪৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঠান্ডার কারণে জমিতে বেশিক্ষণ টিকে থাকা মুশকিল।'

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষকরা দেশের সম্পদ। তারাই ফসল ফলিয়ে দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা নিশ্চিত করছেন। জমিতে ফসল ফলাতে তারা শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সবকিছুই উপেক্ষা করেন।'

'বর্তমানে কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশা থাকলেও কৃষকরা ভোরবেলায় মাঠে কাজ করছেন। কৃষকের পরিশ্রমই দেশের সমৃদ্ধি।'