প্রতি লিটার সরিষার তেলের সর্বোচ্চ উৎপাদন ব্যয় ১১৪ টাকা

By আনিস মণ্ডল
27 February 2024, 02:09 AM
UPDATED 27 February 2024, 12:32 PM

চলতি মৌসুমে উন্নতমানের এক লিটার সরিষার তেলের উৎপাদন ব্যয় দাঁড়াচ্ছে সর্বোচ্চ ১১৪ টাকা। সংশ্লিষ্ট কৃষক, ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও তেল মিলের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে।

তারা বলছেন, দুই বছরের ব্যবধানে কুষ্টিয়ায় সরিষার উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় উৎপাদন খরচ কমেছে।

কুষ্টিয়ার উজানগ্রাম, ঝাউদিয়া, পোড়াদহ ও বাঁশগ্রামের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে মনপ্রতি সরিষা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায়। মাঠের সব সরিষা কৃষকের ঘরে ওঠানোর পর এই দাম আরও কমতে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুরের ভট্টাচার্য ওয়েল মিলের মালিক তাপস কুমার সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এক মন সরিষা থেকে গড়ে ১৬ লিটারের বেশি তেল পাওয়া যায়। জাতভেদে এই পরিমাণ ১৮ থেকে ১৯ লিটার পর্যন্ত হয়। এ ছাড়া এক কেজি বর্জ্য বাদ দিয়ে বাকিটা হয় খৈল—যা পশু-পাখির খাদ্য হিসেবে খুবই জনপ্রিয়।

তিনি জানান, বাজারে বর্তমানে এক মন সরিষার দাম গড়ে দুই হাজার ৪০০ টাকা। রোদে শুকিয়ে ভাঙানোর উপযোগী সরিষার দাম সর্বোচ্চ দুই হাজার ৬০০ টাকা। এই পরিমাণ সরিষার তেল ভাঙাতে ব্যয় ৩৪০ টাকা। তাতে সরিষা কেনা ও ভাঙানোর ব্যয় দাঁড়াচ্ছে দুই হাজার ৯৪০ টাকায়। সাধারণত এখান থেকে ১৬ লিটারের বেশি তেল ও ২৫ কেজি খৈল পাওয়া যায়। ২৫ কেজি খৈলের দাম (গড়ে ৪৫ কেজি টাকা) এক হাজার ১২৫ টাকা। ব্যয়ের বাকি এক হাজার ৮১৫ টাকাকে ১৬ লিটার দিয়ে ভাগ করলে প্রতি লিটার সরিষার তেলের ব্যয় দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ১১৪ টাকায়, যা সবচেয়ে ভালো মানের তেলের ক্ষেত্রে। এর বাইরে জাতভেদে এক মন সরিষায় ১৯ লিটার পর্যন্ত তেলও পাওয়া যায়। সেই হিসাবে তেলের উৎপাদন ব্যয় নেমে আসে ৯৬ টাকার কাছাকাছি।

তাপস বলেন, 'এবার সরিষার ব্যাপক উৎপাদন হয়েছে। দাম কম ও বিশুদ্ধতার নিশ্চয়তা থাকায় ভোক্তারা সরিষার তেলের দিকে ঝুঁকছেন। সয়াবিন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বাজার বিবেচনায় মনে হচ্ছে সরিষার দাম আরও কমবে।'

তবে তেলকল মালিকদের হিসাবের চেয়ে বেশি তেল পাওয়ার কথা জানালেন কৃষকরা। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া গ্রামের সরিষা চাষি বিল্লাল হোসেন বলেন, এ বছর এক বিঘা জমিতে ছয় মনের মতো সরিষা হয়েছে। বাজারে সরিষা বেশি ওঠায় দাম কিছুটা কম।

গত সপ্তাহে দুই হাজার ৩০০ টাকা মনে তিনি সরিষা বিক্রি করেছেন বলে জানান।

img_2686.jpeg
ছবি: স্টার

'বছরজুড়ে খাব বলে নিজেদের জন্য এক মন সরিষা ভাঙিয়ে এনেছি। এক মন থেকে আমি প্রায় ১৮ লিটার তেল পেয়েছি', বলেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ মৌসুমে কুষ্টিয়ায় ১৩ হাজার ৭২১ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হয়। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টনে। আর ২০২৩-২৪ মৌসুমে উৎপাদিত সরিষার পরিমাণ ২২ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন, যা কুষ্টিয়ায় উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

কৃষকরা বলছেন, আমন ও বোরো ধানের মধ্যবর্তী সময়ে দুই মাস ১০ দিনেই সরিষা ঘরে উঠে যায়। ফলে জমি পরিত্যক্ত রাখার চেয়ে সরিষা চাষ উত্তম। এতে তাদের পরিবারের ভোজ্যতেলের চাহিদাও মিটে যায়।

তাপস কুমার সাহা জানান, মিল গেটে দেশি সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ১৭০ টাকায়।

আর খুচরা বাজারে এই তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা লিটারে।

কুষ্টিয়া পৌর বাজারের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা নিশান জানান, প্রতি লিটার খোলা সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। স্থানীয় ব্র্যান্ড লাল মোহাম্মদ ওয়েল মিলের তেল বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা লিটার। এ ছাড়া বিভিন্ন শীর্ষ ব্র্যান্ডের বোতলজাত সরিষার তেলের লিটার ৩৫০-৩৬০ টাকা।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, 'আগে কৃষকরা আমন ধান কেটে জমি ফেলে রাখত, পরে বোরো চাষ করত। কিন্তু আমাদের কিছু উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষকরা বুঝতে শিখেছেন যে, সরিষা তুলেও বোরো আবাদ করা যায়। এ জন্য সরিষার উৎপাদন বাড়ছে, দামও কমছে।'