আগেও দুবার হত্যাচেষ্টা, গুরু-শিষ্যের দ্বন্দ্বে সারোয়ারের শেষ পরিণতি
চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ডে একসময় গুরুর নির্দেশে চলতেন সারোয়ার হোসেন বাবলা। কিন্তু সেই গুরুকেই অতিক্রম করার চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত কেড়ে নেন তার জীবন।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর বায়েজিদ থানার খন্দকার পাড়ায় বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন সারোয়ার। সেসময় হঠাৎ পেছন থেকে এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই সারোয়ারের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ হন এরশাদসহ আরও দুজন।
সারোয়ারের ছোট ভাই মোহাম্মদ আজিজ বলেন, 'সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের অনুসারীরা দীর্ঘদিন ধরে আমার ভাইকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। আগে দুবার ব্যর্থ হলেও এবার তারা সফল হয়েছে।'
চট্টগ্রামের বায়েজিদ ও পাঁচলাইশ এলাকায় একসময় ছিল সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের একচ্ছত্র আধিপত্য। ২০০০ সালের বাহাদ্দারহাটের আট খুন মামলার পর থেকেই তার নামে কেঁপে উঠতো শহর। সাজ্জাদেরই ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠেন সারোয়ার। তবে সময়ের সঙ্গে সারোয়ারের ভেতরে জন্ম নেয় ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা। এরপর তিনি আলাদা হয়ে যান সাজ্জাদের দল থেকে। সঙ্গে নেন তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী নূর নবী ম্যাক্সনকে। তখন থেকেই সাজ্জাদের সঙ্গে সারোয়ারের সম্পর্কের অবনতি।
পরে নূর নবী ও সারোয়ার মধ্যপ্রাচ্যে পালিয়ে যান। সেখান থেকেও চলতো দুজনের নানা অপরাধ। এরপর কাতারের পুলিশের হাতে ধরা পড়েন নূর নবী। পরে সারোয়ার ভারতে পালিয়ে যান। ২০২০ সালে নিজে দেশে ফেরেন সারোয়ার, তবে বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সারোয়ার দেশে ফেরার পর থেকেই চেষ্টা করছিলেন নিজের প্রভাব ফিরিয়ে আনতে, বিশেষ করে বায়েজিদ ও অক্সিজেন এলাকায়। কারাগারে থেকে শুরু হয় সারোয়ারের চাঁদাবাজি। অন্যদিকে, এতে ক্ষিপ্ত হয় সাজ্জাদের অনুসারীরা।
পুলিশের ভাষ্য, সাজ্জাদ বিদেশে বসেও ফোন আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার পুরোনো দল পরিচালনা করতেন। স্থানীয় নেতৃত্ব ছিল সাজ্জাদের আরেক শিষ্য ছোট সাজ্জাদের হাতে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় বিপদ ডেকে আনে চলতি বছরের মার্চ মাসের ঘটনা। গোপন সূত্রে পুলিশ রাজধানীর একটি বিপণিবিতান থেকে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। তদন্তে উঠে আসে, তাকে ধরিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন সারোয়ার। এই বিশ্বাস থেকেই সাজ্জাদের শিবিরে শুরু হয় ক্ষোভ আর প্রতিশোধের পরিকল্পনা।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে বাকলিয়া এক্সেস রোডে প্রাইভেটকারে গুলিবর্ষণের এক ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যান সারোয়ার, নিহত হন তার দুই সহযোগী। পরে মে মাসে নিহত হন তার ঘনিষ্ঠ সহচর ঢাকাইয়া আকবর। তার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ায় একটি ভয়ংকর অডিও বার্তা— 'তোমার সময় শেষ। যা খাও, খেয়ে নাও।'
নিহতের সারোয়ারের পরিবারের দাবি, সেই হুমকি ছিল ছোট সাজ্জাদের অনুসারীদের।
সারোয়ারের বাবা আব্দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, 'ছেলেকে বলেছিলাম, সাবধানে থাক। সে বলেছিল, আমার এলাকায় কেউ কিছু করতে পারবে না। কিন্তু পারলো।'
পুলিশ তালিকায় সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত সারোয়ারের নামে অন্তত ১৫টি মামলা ছিল—খুন, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে।
বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, 'এটা পুরোনো শত্রুতার ফল। দীর্ঘদিনের প্রতিহিংসা থেকেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে।'
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, 'বিদেশ থেকে এই হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।'