বরগুনায় ভাঙচুর হওয়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এক বছরেও সংস্কারের উদ্যোগ নেই

সোহরাব হোসেন
সোহরাব হোসেন
6 December 2025, 06:12 AM

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৫ আগস্ট বরগুনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। সেই ঘটনার এক বছরের বেশি সময় পার হলেও জাদুঘরটি এখনো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

একসময় এই জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের তিন শতাধিক ঐতিহাসিক আলোকচিত্র, বই ও স্মারক সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত রাইফেল, পোশাক, রান্নার পাত্র ও যুদ্ধকালীন নানা সামগ্রী।

এ ছাড়া এখানে প্রদর্শিত হতো বেতাগীর বহু পুরোনো শাহি মসজিদ, মির্জাগঞ্জের ঐতিহাসিক মজিদবাড়িয়া মসজিদ ও বেতাগীর কাউনিয়ায় পার্বতী রঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের মন্দিরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ছিল পুরোনো রেডিও, টেলিভিশন এবং ১৯৯০ সালে তালতলীর জোয়ালভাঙ্গা থেকে উদ্ধার করা ৪৮ ফুট দীর্ঘ তিমির কঙ্কাল। বিভিন্ন দেশের প্রায় এক হাজার ধাতব ও কাগজের মুদ্রাও ছিল সংগ্রহে। এসব নিদর্শনের অনেকগুলোই এখন নিখোঁজ।

২০১৩ সালে বরগুনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির নিচতলায় একটি কক্ষে মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি স্থাপন করা হয়। ২০১৮ সালে এটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় এবং ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে উন্নীত হয়। এরপর থেকে শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা নিয়মিত জাদুঘর পরিদর্শনে আসতেন।

জাদুঘরের ট্রাস্টি এবং সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব চিত্তরঞ্জন শীল জানান, ১৯৮৫-৮৬ সালে স্থানীয় সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের ছবি সংগ্রহ ও প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেন। তিনি বলেন, 'সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, স্থানীয় প্রশাসন, রোভার স্কাউটস ও রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীরা এই উদ্যোগে সহায়তা করেছিলেন।'

গত বছরের ৫ আগস্টের হামলাকে 'পরিকল্পিত ভাঙচুর' হিসেবে উল্লেখ করেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, 'হামলাকারীরা কাচে ঘেরা প্রতিটি টেবিল ও ডিসপ্লে ইউনিট ভেঙে অনেক নিদর্শন লুট করে এবং বই ও নথিপত্র ছিঁড়ে বাইরে ফেলে দেয়। যা অবশিষ্ট ছিল, তা–ও পরে অনেকে নিয়ে যায়।'

হামলার তিন দিন পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবশিষ্ট জিনিসপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তবে জাদুঘরের ট্রাস্টি ও স্থানীয় নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান জানানো হলেও লুট হওয়া কোনো নিদর্শন ফেরত পাওয়া যায়নি।

বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক ইউসুফ মৃধা জাদুঘরটি সংস্কার এবং চুরি যাওয়া নিদর্শন উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের কাছে সহায়তা চেয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে বরগুনার জেলা প্রশাসক তাসলিমা আক্তারের মুঠোফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।