শিশু সাজিদের দাফন সম্পন্ন, শোকে বিহ্বল মা

সোহানুর রহমান রাফি
12 December 2025, 06:31 AM
UPDATED 12 December 2025, 12:42 PM

রাজশাহীর তানোরের কোকয়েলহাট গ্রামে দুই বছরের শিশু সাজিদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ৩২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাজিদের মৃত্যুতে পুরো গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আজ শুক্রবার সকালে আশপাশের এলাকা থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসেন দুই বছরের সাজিদকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে।

সাজিদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। এরপর তাকে দাফন করা হয় গ্রামের কবরস্থানে।

প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল মা রুনা খাতুন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কান্নার পর তিনি ক্লান্ত, খেতে পারছেন না, কথা বলার শক্তিও নেই। চারপাশে শোকাহত আত্মীয়রা একজন আরেকজনকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। তবে কেউ চোখের পানি আটকাতে পারছিলেন না।

গত ৩০ বছর ধরে তারা এখানে বসবাস করছেন। রুনা ও রকিবুল ইসলাম দশ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন। তাদের বড় ছেলের বয়স নয়, আর ছোট ছেলের বয়স মাত্র তিন মাস। সাজিদ ছিল মেজো সন্তান।

ভাঙা গলায় রুনা খাতুন বলেন, 'আমার সাজিদ ছিল চঞ্চল ছিল। সবকিছুতে ওর আগ্রহ ছিল।' এটুকু বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সাজিদের বাবা গাজীপুরে একটি গুদামে কাজ করেন। তিনি সেখানেই থাকেন।

এর আগে গত বুধবার দুপুরের দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। মাটি বোঝাই একটি ট্রলি হঠাৎ জমিতে দেবে যায়। রুনা খাতুন সাজিদের হাত ধরে সেই জায়গা দেখতে যান।

'একটুপর সাজিদ মা বলে চিৎকার করে। তারপরই গর্তে পড়ে গেল,' বলেন রুনা খাতুন।

তিনি আরও বলেন, 'প্রথমে ভেবেছিলাম পুকুরে পড়ে গেছে। তারপর ওই গর্ত থেকে খুব ক্ষীণ আওয়াজ শুনতে পেলাম, মা, মা। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশীদের ডাকলাম।'

sajid1.jpg
শুক্রবার সকালে আশপাশের এলাকা থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসেন দুই বছরের সাজিদকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে। ছবি: স্টার

স্থানীয়দের ভাষ্য, এটি ছিল কয়েকটি সরু, পরিত্যক্ত ভূগর্ভস্থ পানি পরীক্ষার জন্য খোড়া গর্ত। কছিরউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি টিউবওয়েল বসানোর উপযুক্ত জায়গা খুঁজতে এটি খনন করেছিলেন। তবে গর্তটি পরে ভরাট করা হয়নি। এ ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যেই কছিরউদ্দিন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান এবং এখনো পলাতক।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, মাটি বারবার ধসে পড়ায় উদ্ধারকর্মীদের খনন কাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে ওঠে।

তানোর ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ আব্দুর রউফ বলেন, 'শিশুটিকে পরে ৪৫ ফুট গভীরে পাওয়া যায়। সম্ভবত অক্সিজেনের অভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা যাওয়ার আগেই স্থানীয়রা উদ্ধারচেষ্টা চালায়, এতে ওপরের মাটি ধসে গর্তের অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আমরা যে অক্সিজেন সরবরাহ করছিলাম তা তার কাছে পৌঁছাতে পারেনি।'

উদ্ধারের পর সাজিদকে অ্যাম্বুলেন্সে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কবরের পাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি সামলাতে পারছিলেন না সাজিদের বাবা রকিবুল।

তিনি বলেন, 'গর্তটা যদি ভরাট করা থাকত, তাহলে এটা হতো না। আমার ছেলেটা যদি ১০ থেকে ১৫ ফুট নিচেও থাকত, হয়তো বাঁচানো যেত। কিন্তু সে ৪০ ফুট নিচে এই শীতের ঠাণ্ডায় ৩২ ঘণ্টা পড়ে ছিল। আমি বিচার চাই, যেন বাংলাদেশের আর কোনো পরিবার এভাবে সন্তান না হারায়।'

আত্মীয়রাও একই দাবি জানালেন। রকিবুলের ফুফু শেফালি বলেন, 'এভাবে গর্ত করে ফেলে রাখা অপরাধ। আমাদের পরিবার শেষ হয়ে গেছে। আমরা সাজিদের মৃত্যুর বিচার চাই।'