‘ভয়ভীতি’ ছাড়া খেলতে চায় রাঙ্গাটুঙ্গি ফুটবল ক্লাবের মেয়েরা

By মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম রুবাইয়েত
22 November 2025, 03:26 AM
UPDATED 22 November 2025, 09:32 AM

ঠাকুরগাঁওয়ের রাঙ্গাটুঙ্গি ইউনাইটেড নারী ফুটবল একাডেমি—যেখান থেকে জাতীয় দলের কয়েকজন খেলোয়াড় উঠে এসেছে— সেই ক্লাব এখন অনিশ্চয়তার মুখে। কারণ এলাকার একাংশ ধর্মীয় আপত্তির কথা তুলে ধরে একাডেমির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই একাডেমিটি রাণীশংকৈল উপজেলা সদর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের রাঙ্গাটুঙ্গি গ্রামে অবস্থিত। বিভিন্ন বয়সী স্থানীয় শিশু-কিশোরেরা নিয়মিতভাবে একাডেমির এই মাঠে অনুশীলন করে। প্রায় ২৫ বিঘা (১৫.৬২৫ একর) সরকারি খাসজমির একটি অংশজুড়ে রয়েছে মাঠটি।

মাঠের বাইরে দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের কিছু অংশ স্থানীয়রা কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার করে।

শনিবার বিকেলে একাডেমির কয়েকজন নারী সদস্যের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, প্রতিষ্ঠার এক দশক পরে এসে এখন এলাকার কিছু মানুষ দাবি তুলেছে যে কবরস্থানের পাশে মেয়েদের ফুটবল খেলা অনুচিত—এ অজুহাতে একাডেমির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

তাদের মধ্যে ১৫ বছর বয়সী জয়া কিসকু জানান, দুই সপ্তাহ আগে একদল লোক মাঠের কিছু জায়গা খুঁড়ে ফেলে এবং ফুটবল অনুশীলন থামানোর জন্য গোলপোস্টগুলো উপড়ে ফেলার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, 'এখন আমরা ভয় নিয়ে অনুশীলন করি, চিন্তা করি আবার যদি তারা আক্রমণ করে বসে।'

একাডেমি সূত্র আরও জানায়, ওই আক্রমণকারীরা জেলা প্রশাসকের স্থাপিত কবরস্থান ও মাঠের আলাদা সীমানা দেয়ালের ভিত্তিপ্রস্তরও ভেঙে দিয়েছে।

কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে জয়া বলেন, 'আমাদের একটা মাঠ দিন, আমরা ভালো ফুটবল খেলেই দেখাবো।'

একাডেমির আরেক সদস্য ১৪ বছর বয়সী সুবর্ণা বলেন, 'আমরা ভয় ছাড়া খেলতে চাই। এজন্য আমরা স্থানীয় প্রশাসনের নিরাপত্তা চাই।'

একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এবং রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তাজুল ইসলাম জানান, এই একাডেমি থেকে নানান সময়ে ১৮ জন মেয়ে জাতীয় নারী ফুটবল দল এবং বয়সভিত্তিক দলে খেলার সুযোগ পেয়েছে।

বর্তমানে একাডেমির শিক্ষার্থী মোসম্মত সাগরিকা, স্বপ্না রানি ও কোহাতি কিসকু জাতীয় নারী ফুটবল দলে আছেন। রেশমি আক্তার ও প্রতিমা রানি  আছেন অনূর্ধ-১৭ দলে। সাবেক জাতীয় খেলোয়াড় সোহাগি কিসকু ও অঞ্জনা রানিও এই একাডেমিতেই ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল জানান, একাডেমির কার্যক্রম চলমান রাখতে এবং গ্রামীণ মেয়েদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিতে কর্তৃপক্ষ চাইলে ৭-৮ বিঘা (৪.৪-৫ একর) জমি একাডেমির জন্য বরাদ্দ দিলে সমস্যার সমাধান হতে পারে।

একাডেমিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি স্বীকার করে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরশেদুল হক বলেন, কবরস্থান ও মাঠকে কেন্দ্র করে গ্রামে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। তবে পুলিশ সতর্ক আছে বলে জানান তিনি, 'যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঠেকাতে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম বলেন, 'এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা এবং একাডেমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খোঁজা হবে।'