দেশের বিশ্ববিদ্যালগুলোর জাতীয় র‌্যাংকিং চায় ইউজিসি

মুনীর মমতাজ
মুনীর মমতাজ
12 January 2023, 16:33 PM

মানসম্মত বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দেশীয় বা জাতীয় র‌্যাংকিংয়ের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইউজিসির ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২১-এ এই সুপারিশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে তুলে দিয়েছে ইউজিসি।

জাতীয় র‌্যাংকিংয়ের বিষয়ে ইউজিসির সুপারিশে বলা হয়েছে, 'আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং ব্যবস্থার আদলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের জন্য একটি র‌্যাংকিং ব্যবস্থা প্রবর্তনে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।'

প্রতিবছর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিয়ে দেখা যায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান অনেক পেছনের দিকে। গত বছরের ৮ জুন যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস) বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিং-২০২৩ প্রকাশ করে। সেখানে বিশ্বের ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান পায়নি বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। তবে, ৮০১ থেকে ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)।

এ ছাড়া গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত কিউএস র‌্যাংকিংয়ে এশিয়ার ৭০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ১৫১তম। তবে ওই তালিকায় শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও পাকিস্তানের ৩টি, ভারতের ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তালিকার শীর্ষে আছে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং দ্বিতীয়স্থানে আছে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং চীনের জিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় আছে তৃতীয় স্থানে। 

তালিকায় বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে, বাংলাদেশ প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) যথাক্রমে ১৯৯তম এবং ২১৯তম অস্থানে আছে।

উচ্চশিক্ষা বিষয়ে ইউজিসির সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, 'সাম্প্রতিক সময়ে দেশে উচ্চশিক্ষার ব্যাপক বিস্তৃতি ও সম্প্রসারণ ঘটেছে। নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক মাস্টারপ্লান বাস্তবায়ন করা জরুরি। একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান প্রণীত ও তা বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা যুগের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন করতে পারবে এবং এর ফলে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের সম্মাজনক অবস্থান নিশ্চিত হবে।'

এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সম্মিলিতভাবে একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান প্রনয়ণকল্পে জরুরি-ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে ইউজিসি।

এ ছাড়া সরকার প্রতিটি জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এবং ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় জমি অধিগ্রহণেও সংকট তৈরি হচ্ছে। এ জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমির পরিমাণ যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করতে একটি নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করেছে ইউজিসি।
  
ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৫৩টি সরকারি (২০২১ সালে ছিল ৫০টি) ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৪৪ লাখ ৪১ হাজারের বেশি। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ) অধীন শিক্ষার্থী ৪১ লাখ ৩১ হাজারের মতো। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক–কর্মকর্তা–কর্মচারী ৫২ হাজারের কিছু বেশি। এর মধ্যে শিক্ষক প্রায় ১৫ হাজার।