‘কষ্ট একটাই অভিনয় করতে পারছি না’

শাহ আলম সাজু
শাহ আলম সাজু
18 August 2025, 15:07 PM

প্রায় ৪০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন প্রবীর মিত্র। 'জলছবি' সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় আসেন তিনি। সিনেমার বাইরে আর কিছুই করেননি এই শিল্পী। অভিনয় ক্যারিয়ারে নায়ক, বড় ভাই ও বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। নেতিবাচক চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। কালজয়ী অনেক সিনেমা করেছেন তিনি। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা।

ঋত্বিক ঘটকের 'তিতাস একটি নদীর নাম' সিনেমায় অভিনয় প্রবীর মিত্রর ক্যারিয়ারে মাইলফলক হয়ে আছে। এই সিনেমাটি তাকে দিয়েছে অন্যরকম খ্যাতি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, তার সিনেমায় অভিনয় করা ছিল স্বপ্নের মতো।

গুণী অভিনেতা প্রবীর মিত্রর জন্ম ১৯৪০ সালের ১৮ আগস্ট চাঁদপুরে।

স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথের 'ডাকঘর' নাটকে অভিনয় করেন। সেই যে শুরু হলো অভিনয়, এরপর চলতেই থাকে। আরও কিছুদিন পুরান ঢাকায় মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন। সেই সময়ে প্রয়াত অভিনেতা ফরিদ আলীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে। প্রবীর মিত্রকে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন ফরিদ আলী।

চলচ্চিত্র অভিনেতা প্রবীর মিত্র একসময় ক্রিকেট খেলেছেন ঢাকা ফার্স্ট ডিভিশনে। হকিও খেলেছেন।

প্রবীর মিত্রর কিছু উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে—তিতাস একটি নদীর নাম, জীবন তৃষ্ণা, দুই পয়সার আলতা, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, মিন্টু আমার নাম, নয়নের আলো, পুত্রবধূ, জয় পরাজয়, তীর ভাঙা ঢেউ, জলছবি, জন্ম থেকে জ্বলছি, বড় ভালো লোক ছিল, চরিত্রহীন, অভাগী, হারানো সুর, দহন, যোগাযোগ, রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা...ইত্যাদি।

দুই হাঁটুতে সমস্যা (আর্থ্রাইটিস) নিয়ে প্রবীর মিত্র দীর্ঘদিন অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন। কথায় কথায় একদিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, অভিনয়টাই তো করেছি সারাজীবন। ভালো হয়ে গেলে আবারও সিনেমায় কাজ করতাম। কষ্ট একটাই, অভিনয় করতে পারছি না।

তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, সিনেমা জগতে সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু কে। বলেছিলেন, 'এটিএম শামসুজ্জামান আমার স্কুলজীবনের বন্ধু। আমার জীবনের সেরা বন্ধু।'

আনোয়ার হোসেন সম্পর্কে প্রবীর মিত্র বলেছিলেন, তাকে আমি ওস্তাদ বলে ডাকতাম। ওস্তাদের কাছ অনেক কিছু শিখেছি।

প্রবীর মিত্রর সঙ্গে শেষ যখন কথা হয়েছিল, জানতে চেয়েছিলাম, যে জীবন পার করে এলেন, আপনি কি সেই জীবন নিয়ে সুখী? তিনি বলেছিলেন, আমার চাওয়া সীমিত। ছোট ছোট পাওয়ায় আমি খুশি থাকি। কষ্ট একটাই, অভিনয় করতে পারছি না। যদি ভালো হয়ে আবারও অভিনয় করতে পারতাম, তাহলে কোনো কষ্ট থাকত না।

গুণী এই অভিনেতা চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি মারা গেছেন। যেদিন রাতে তিনি মারা যান, সেদিন সন্ধ্যার পর রাজধানীর একটি হাসপাতালে গিয়েছিলাম তাকে দেখতে। তার পুত্র সিফাত ইসলাম, পুত্রবধূ সোনিয়া ইসলামসহ পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য ছিলেন।

সেদিন সিফাত ইসলামের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা হয়েছিল। তার বাবা সম্পর্কে সবশেষ খোঁজ নেওয়ার জন্যই গিয়েছিলাম। সিফাত ইসলাম আইসিইউতে তার বাবাকে দেখে এসে বলেছিলেন, 'বাবার অবস্থা ভালো না। আপনারা আশীর্বাদ করবেন।'

তারপর বাসায় ফেরার দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর জানতে পারি, প্রবীর মিত্র আর বেঁচে নেই।

আজ ১৮ আগস্ট কিংবদন্তি এই অভিনেতার জন্মদিনে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।