জুড়ি নদীতে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে জুড়ি নদী। এটি দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকির সঙ্গে সংযুক্ত। বর্তমানে স্থানীয় দুটি বাজারের আবর্জনা, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্জ্য সরাসরি এই নদীতে ফেলা হচ্ছে।
এসব কারণে নদীর পাশাপাশি হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিকসহ এ ধরনের বর্জ্যের দূষণ স্থানীয় মিঠা পানির মাছসহ বহু প্রজাতির বিলুপ্তির কারণ হতে পারে।
ভবানীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা এখানে ব্যবসা করি, কিন্তু শহরের মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট বর্জ্য ফেলার স্থান না থাকার কারণে অনেকেই তাদের আবর্জনা নদীতে ফেলছেন। এটা আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা।
কামিনীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আম্বিয়া রহমান জানান, তারা বহুবার প্রশাসনকে একটি বর্জ্য ফেলার জন্য নির্দিষ্ট স্থান তৈরির অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এমএ আজিজ এই প্রতিবেদককে বলেন, প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ এটি মাটির সাথে সহজে মেশে না। ফলে মাটির গুণমান মারাত্মকভাবে কমে যায়।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে পলিথিন জলাশয় বা নদীর তলদেশে জমা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে পলিথিন দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় ভেঙে বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে প্রবেশ করে। তারা জলাশয়ের মাছের মধ্যে প্রবেশ করে।
তিনি আরও বলেন, এক সময় এটি মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে। বর্ষাকালে এই নদীতে জমে থাকা পলিথিন হাওর অঞ্চলে প্রবাহিত হবে, যা হাওরের বাস্তুতন্ত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
এই অধ্যাপকের পরামর্শ, জনগণের সচেতনতার পাশাপাশি প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যেন পলিথিন কোনোভাবেই জলাশয়ে মিশে না যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সমরজিৎ সিং জানান, হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের নদীতে বর্জ্য ফেলা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাবলু সূত্রধর বলেন, এটি গুরুতর সমস্যা। আমরা জানি, সঠিক বর্জ্য নিষ্কাশন স্থানের অভাবের কারণে জনগণকে জুড়ি নদীসহ আশপাশে আবর্জনা ফেলতে হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি এবং শিগগিরই একটি সমাধান বের করার চেষ্টা করব।