‘আত্মজীবনীর পাণ্ডুলিপিটি আর খুঁজে পাইনি’
'চাচার সঙ্গে যখনই কথা বলতাম তখনই আত্মজীবনী লেখার বিষয়ে খবর নিতাম। আপনারা জানেন, কবির ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, স্মৃতি ও অনুভূতি অনেক বেশি ছিল। যতটা জেনেছি, এটি প্রায় অর্ধেক লেখা হয়েছিল। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর পাণ্ডুলিপিটি আর খুঁজে পাইনি।'
কথাগুলো কবি হেলাল হাফিজের ভাতিজি বিপাশা সুলতানার। কবির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
বিপাশা সুলতানা হেলাল হাফিজের ছোট ভাই কবি নেহাল হাফিজের মেয়ে। গত ২৭ নভেম্বর নেহাল হাফিজও মৃত্যুবরণ করেছেন।
এর আগে, গত বছর আজকের দিনে মারা যান প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ।
১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
এক বছরের মধ্যেই চাচা ও বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা বিপাশা। বলেন, 'কবি হেলাল হাফিজ বাবাকে বলেছিলেন, যদি আত্মজীবনী শেষ না করে মারা যাই, তাহলে সেটি লেখার দায়িত্ব বাবার। অথচ তিনি মারা যাওয়ার পর বড় চাচা বাবাকে রুমেই প্রবেশ করতে দেননি। ফলে পাণ্ডুলিপিসহ কবিতার খাতাটি আমাদের হাতে আর আসেনি। কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে এই ভাবনা আমাদের দিগুণ বেদনার্ত করেছে।'
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'যে জলে আগুন জ্বলে' দিয়েই মানুষের হৃদয়ে আসন করে নেন হেলাল হাফিজ। কাব্যগ্রন্থটি কবিকে দিয়েছে অসামান্য খ্যাতি। এরপর দীর্ঘদিন আর কোনো বই বের করেননি তিনি। ২০১২ সালে এই কাব্যগ্রন্থের কবিতার সঙ্গে কিছু কবিতা যুক্ত করে প্রকাশ করা হয় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'কবিতা একাত্তর'। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় কবির তৃতীয় কবিতার বই 'বেদনাকে বলেছি কেঁদো না'।
হেলাল হাফিজের কবিতা লড়াইয়ে, সংগ্রামে, প্রেমে-বিরহে, দ্রোহে যাপিত জীবনের পরতে পরতে স্পর্শ দিয়ে যায়। কেবল মুক্তিযুদ্ধ কিংবা গণ-অভ্যুত্থানের মতো প্রেক্ষাপটে নয়, যেকোনো অন্যায়-শোষণ-অবিচারে হেলাল হাফিজের উচ্চারণ সবার হয়ে ওঠে।
কবিতায় অসামান্য অবদানের জন্য হেলাল হাফিজ ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি এবং ২০২৫ সালে মরণোত্তর একুশে পদক পুরস্কার পান। এত কম লিখে এত খ্যাতি পাওয়ার নজির বাংলা সাহিত্যে আর নেই।

