ছুটির ঢাকা: জনকল্লোল এখনো জাগেনি

মামুনুর রশীদ
মামুনুর রশীদ
15 April 2024, 08:50 AM
UPDATED 20 April 2024, 16:17 PM

ঈদে 'লম্বা' ছুটিতে ঢাকা থেকে 'বাস-ট্রেন-লঞ্চে চড়ে পাখির মতোন রঙচটা বিমানের পেটের ভেতর মাছের মতো কাতরানি তুলে নিজস্ব ঠিকানার সন্ধানে' ছুটে যাওয়া বেশিরভাগ মানুষ এখনো ফেরেনি।  

সেই অবকাশে কোনো গন্তব্য খুঁজে না পাওয়া 'দেশ ও দশহীন' দুই কোটি জনসংখ্যার এই 'শূণ্যগর্ভা' ঢাকা মহানগরের শূণ্য ইমারতগুলো এখন যেন একেকটি 'নিঃস্ব খাঁচা'। পাড়া-মহল্লার খুপরি দোকানগুলোর ঝাপ বন্ধ। ভোর হতে না হতেই চুলা জ্বালানোর আয়োজন নেই চা-খানা আর হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে।

পাশাপাশি দিনভর জনজট ও যানজটে ঠাসা চেনা অ্যাভিনিউ ও বিস্তৃত সড়কগুলোও এখন কেমন শুনশান। ফুটপাতগুলো প্রায় পথচারীশূণ্য। কাঁচাবাজার আর সুপারশপগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি কম। কোথাও কোথাও গ্যারেজের আশপাশজুড়ে শেকলে আটকানো রিকশাগুলো যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে স্থবির কোনো সময়ের কথা।

ye_kaarnne_roleks_ghrri_et_daami.jpg
ঈদের ছুটিতে অলস পড়ে থাকা রিকশাভ্যান। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

এমনিতে বছরজুড়ে 'থামতে না জানা' দেশের প্রধান ও 'নির্ঘুম' এই নগরের অবসরের বিরাম হয় কেবল দুই ঈদের ছুটিতে। এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখের ছুটি শেষে আজ সোমবার খুলেছে অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা ও শেয়ারবাজার। কিন্তু ঈদের পঞ্চম দিনে এসেও সদাব্যস্ত ঢাকার সময় কাটছে এক প্রকার আলস্যে।

আজ সকাল থেকে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা, বনানী, মহাখালী, ফার্মগেট, আগারগাঁও, আসাদগেট, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, গ্রিনরোড, শাহবাগ ও কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে চলিষ্ণু এই শহরের 'আধশোয়া' অবস্থাই চোখে পড়েছে।

rnb.jpg
মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর থেকে তোলা। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয়, ঈদে অর্ধেকের বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়েন। কবি আল মাহমুদ ঢাকার বাসিন্দাদের এই ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে যেমন লিখেছিলেন, 'ঝাঁকবাঁধা সারসের মতো উড়ে গেল মানুষের অগণিত মাথা'।

মুঠোফোন অপারেটরদের তথ্য অনুযায়ী, এবার ঈদের আগে চার দিনে ৬ থেকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে রাজধানী ছাড়েন ৫৭ লাখের মতো মুঠোফোন সিমধারী। ১০ তারিখের হিসাব ধরলে এই সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা। গত বছর ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা ছেড়েছিলেন এক কোটির বেশি সিমধারী। ২০২৩ সালের এক সমীক্ষা অনুসারে, ঈদের আগে প্রতিদিন গড়ে ৩০ লাখ মানুষ বাড়ি যান।

মাশরাফি বিন মর্তুজা.jpg
দোকান বন্ধ। সড়কেও যান চলাচল কম। কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের চিত্র। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

এবার ঈদ উপলক্ষে ১০, ১১ ও ১২ ছিল সরকারি ছুটি। আবার ঈদের পর ১৩ এপ্রিল শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। পরদিন গতকাল ১৪ এপ্রিল রোববার পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলা নববর্ষের ছুটি ছিল।

ফলে চাকরিজীবীদের কেউ কেউ ১০ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা পাঁচদিন ছুটি কাটিয়ে আজ কর্মস্থলে ফিরেছেন। আবার ঢাকার বাইরে ঈদ করতে যাওয়া অনেকে নিয়েছেন ঐচ্ছিক ছুটি। এদের সংখ্যাই বেশি হওয়ায় অফিস-আদালতে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হতে আরও কয়েক দিন লেগে যাবে বলে ধারণা করছেন অনেকে।

santa_final.jpg
রিকশাগুলোর মতোই এর চালকরাও আছেন অবকাশে। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

এদিকে ঢাকার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে ২১ এপ্রিল। বেশিরভাগ পোশাক কারখানাও খুলবে ২০ এপ্রিলের দিকে। তখন ঢাকা ফিরে যাবে তার চিরচেনা রূপে।

এছাড়া এবারই প্রথমবারের মতো ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা ছয় দিন ছুটি কাটিয়েছেন সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ৯ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা এই ছুটি শেষ হয়েছে গতকাল। আজ দিনের মধ্যভাগ থেকেই সরগরম হয়ে উঠেছে ঢাকার পত্রিকা অফিসগুলোর বার্তাকক্ষ।