১৮২৬ সালের এগনগকাণ্ড

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
13 April 2023, 06:36 AM
UPDATED 13 April 2023, 13:05 PM

নিউইয়র্কের ওয়েস্ট পয়েন্ট সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সুনাম বহুদিনের। বরাবরই সেখানকার তরুণ অফিসারদের জন্য নিয়ম কানুনগুলো খুব কড়া হয়ে থাকে। তবে আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে এই নিয়মগুলো ছিলো আরও বেশি কঠোর। 

ওয়েস্ট পয়েন্টের আবাসিক ছাত্র হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক (সুপারিনটেনডেন্ট) তখন সিলভানাস থেয়ার। সালটা ১৮২৬। ওয়েস্ট পয়েন্টের মিলিটারি একাডেমি তখন বিভিন্ন অভিযোগে সুনাম হারাচ্ছে। দায়িত্ব পেয়েই তাই থেয়ার কঠোর আইন জারি করলেন। কোনোরকম এলকোহল গ্রহণ করলেই শিক্ষাজীবন চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে যাবে, এমনকি তামাক (সিগার, পাইপ বা অন্য কোনো মাধ্যমে) গ্রহণ করলেও স্নাতক পাশ করতে বিলম্ব হবে।
 
ক্যাডেটদের ভেতরের শিথিলতা তাকে আরও কঠোর করে তুললো। তিনি এমনকি উপন্যাস পাঠও নিষিদ্ধ করে দিলেন! এদিকে তীব্র কঠোর অনুশাসনের ভেতরে থাকা ক্যাডেটরা দিন দিন হাঁপিয়ে উঠছিল। 

১৮২৬ সালের এগনগকাণ্ড.jpg
১৮২৬ সালের এগনগকাণ্ড। ছবি: সংগৃহীত

সে বছরের ডিসেম্বর, ক্রিসমাস সমাগত। থেয়ার আইন জারি করলেন, ক্রিসমাসে কোনো অ্যালকোহল চলবে না। এগনগ পান করতে হবে পরিমিত পরিমাণে কোনোরকম অ্যালকোহল ছাড়াই। 

এগনগ মূলত ডিম, দুধ, ক্রিমারসহ আরও কিছু জিনিস দিয়ে বানানো একটি চমৎকার পানীয়। এর সঙ্গে রাম, ব্রান্ডি, শেরি, হুইস্কির মতো মদগুলো অল্প করে মিশিয়ে ককটেল তৈরি করা হয়ে থাকে। এই পানীয়টি জর্জ ওয়াশিংটনেরও খুবই প্রিয় ছিলো। 

সিলভানাস থেয়ার যতই কঠোর আইন করুন না কেন, একাডেমির প্রশিক্ষণার্থীরা অন্তত ক্রিসমাসের দিনে শিথিলতা চেয়েছিলো। আর সেজন্য ১৮২৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে তারা মেতে উঠেছিলো বুনো উল্লাসে। 

জর্জ ওয়াশিংটনের সম্মানার্থে ক্যাডেটদের অ্যালকোহল ফ্রি এগনোগ খাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন থেয়ার। কিন্তু তলে তলে তারা নিচ্ছিলো অন্য প্রস্তুতি। কাছেই ছিলো বিখ্যাত 'বেনি'র গুদাম'। সেখানে গিয়ে ২ গ্যালন হুইস্কি আর এক গ্যালন রাম কিনে নিয়ে আসে কয়েকজন ক্যাডেট। চোরাই পথে পেছনের দিক দিয়ে একাডেমিতে আনা হয় মদ। তারপর ক্রিসমাস ইভের প্রথম প্রহরে উত্তর ব্যারাকে পান করা শুরু হয়।

তারপর রাত যত বাড়তে থাকে, উল্লাস হতে থাকে তত বাঁধনহারা। রাত ৪টার দিকে একাডেমির ক্যাপ্টেন হিচককের ঘুম ভেঙে যায় চিৎকারে। তিনি শব্দের উৎস খুঁজে এগিয়ে আসেন। দেখতে পান উন্মত্ত ক্যাডেটদের হুল্লোড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তিনি সেখানে যান, তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বুঝতে পেরে তাদের 'দাঙ্গা আইন'  পড়ে শোনান। এই আইন অনুযায়ী একাডেমিতে ১২ জনের বেশি মানুষ সমবেত হয়ে এরকম উদযাপন করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয়। 

কিন্তু এতে হীতে বিপরীত হয়। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে যায় দক্ষিণ ব্যারাকেও। সেখানে পার্টিরত ক্যাডেটদের থামাতে এসে ক্যাপ্টেন থর্নটন হামলার শিকার হন ও তাকে 'নক আউট' করা হয়। তারপর উন্মত্ত ক্যাডেটরা এগিয়ে যায় ক্যাপ্টেন হিচককের কক্ষের দিকে। সেখানে জানালার কাঁচ চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয়, হিচকক বাধা দিলে এক ক্যাডেট একটি গুলি ছোঁড়ে! আর তারপরই ক্যাডেটদের গ্রেপ্তার দেখানো শুরু হয়। 

২৫ ডিসেম্বরের সকালে উৎসবের বদলে ক্যাম্পে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। চতুর্দিকে ভাঙা কাঁচ, আসবাবগুলোর জায়গায় জায়গায় ভাঙা। উত্তর ব্যারাক তো বটেই, দক্ষিণ ব্যারাকেরও কেউ কেউ একেবারেই 'ফিট' অবস্থায় নেই। এমনকি বেশিরভাগের দাঁড়ানোর মতো অবস্থাই ছিলো না, প্রশিক্ষণ তো দূরের ব্যাপার। 

সেদিনই সব জানতে পেরেছিলেন সিলভানাস থেয়ার। প্রচণ্ড কঠোর থেয়ার ছাড় দেননি। পরদিন অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর তিনি অভিযুক্তদের বিচারের ব্যবস্থা করেন। ৬ জন ক্যাডেট পদত্যাগ করেন, ১৯ জনের কোর্ট মার্শাল হয়। ১০ জন স্থায়ী বহিষ্কার হন, যাদের ভেতর দুজন পরবর্তীতে কনফেডারেট জেনারেল ও একজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হয়েছিলেন। এ ছাড়া আরও বহুজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে কোর্ট মার্শাল পাওয়া ১৯ জনের ভেতর ৮ জন ছাড়া রেকর্ড বিবেচনায় ক্ষমা পেয়েছিলেন, এর ভেতর ৫ জন স্নাতক সম্পন্নও করতে পেরেছিলেন। পরবর্তীতে কনফাডেরেট স্টেট প্রেসিডেন্ট হওয়া সেদিনের তরুণ জেফারসন ডেভিসও পেয়েছিলো শাস্তি; একমাসেরও বেশি সময় তাকে আটক থাকতে হয়েছিলো কোয়ার্টারেই।

 

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট
গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়