চোখের ড্রপে যাবে চালশে, চশমার দিন শেষ?

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
16 September 2025, 11:08 AM

যারা চশমা ছাড়া কাছের লেখা পড়তে পারেন না, তাদের জন্য সুখবর আসছে। চিকিৎসকেরা এমন এক বিশেষ চোখের ড্রপ তৈরি করেছেন, যার দু'ফোটা দিলেই স্পষ্ট পড়া যাবে সবকিছু।

সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ 'প্রেস বায়োপিয়া' বা চালশে সমস্যায় ভোগেন। এই সমস্যা থাকলে কাছের বস্তু বা লেখার ওপর ফোকাস করা কঠিন হয়। সামনে ধরা বই বা খবরের কাগজের লেখা ঝাপসা দেখায়। সাধারণত চল্লিশ বছরের বেশি বয়সীরা এই সমস্যায় ভোগেন বলে বাংলায় এর নাম হয়েছে চালশে। চশমা ব্যবহার বা সার্জারির মাধ্যমে এর সমাধান হয়। কিন্তু অনেকের কাছেই চশমা পরাটা ঝামেলার, আর সবার পক্ষে সার্জারি করাও সম্ভব হয় না।

তবে বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন, দিনে মাত্র দুবার চোখের ড্রপ ব্যবহার করেই এই সমস্যার সহজ সমাধান মিলতে পারে।

গত রোববার ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ ক্যাটারাক্ট অ্যান্ড রিফ্র্যাক্টিভ সার্জনদের সম্মেলনে এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ড্রপ ব্যবহারের পর দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার চার্টে বেশিরভাগ মানুষই আগের চেয়ে কয়েক লাইন বেশি পড়তে পারছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চিকিৎসা পদ্ধতি চশমার একটি নিরাপদ এবং কার্যকর বিকল্প হতে পারে।

এই ড্রপে দুটি উপাদান রয়েছে—পাইলোকার্পিন এবং ডাইক্লোফেনাক। পাইলোকার্পিন চোখের মণিকে সংকুচিত করে এবং চোখের লেন্স নিয়ন্ত্রণকারী পেশিকে সক্রিয় করে, যা বিভিন্ন দূরত্বের বস্তুর ওপর ফোকাস করতে সাহায্য করে। আর ডাইক্লোফেনাক হলো একটি নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ, যা চোখের প্রদাহ কমায়।

আর্জেন্টিনায় ৭৬৬ জন মানুষের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। অংশগ্রহণকারীরা প্রতিদিন দুবার এই ড্রপ ব্যবহার করেন। তাদের তিনটি ভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে পাইলোকার্পিনের তিনটি ভিন্ন ঘনত্বের (১%, ২% ও ৩%) ড্রপ দেওয়া হয়।

ফলাফলে দেখা যায়, ১% ঘনত্বের ড্রপ ব্যবহারকারী ১৪৮ জনের প্রায় সবাই দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার চার্টে দুই বা তার বেশি অতিরিক্ত লাইন পড়তে পেরেছেন। ২% ঘনত্বের ড্রপ ব্যবহারকারী ২৪৮ জনের মধ্যে ৬৯% তিন বা তার বেশি অতিরিক্ত লাইন পড়তে সক্ষম হন। ৩% ঘনত্বের ড্রপ ব্যবহারকারী ৩৭০ জনের মধ্যে ৮৪% তিন বা তার বেশি অতিরিক্ত লাইন পড়তে পারেন।

প্রথম ড্রপ ব্যবহারের এক ঘণ্টার মধ্যেই রোগীদের দৃষ্টিশক্তিতে গড়ে ৩.৪৫ জেগার লাইন (কাছের দৃষ্টিশক্তি মাপার একক) উন্নতি দেখা গেছে।

তবে এর কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথাও জানা গেছে, যার মধ্যে রয়েছে—সাময়িকভাবে দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, ড্রপ দেওয়ার সময় চোখে জ্বালাপোড়া এবং মাথাব্যথা। তবে এই চিকিৎসা সাধারণ রোগীদের ওপর প্রয়গের আগের আরও বড় পরিসরে ও দীর্ঘমেয়াদে গবেষণা করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।