ইরানের কোনো গোপন পরমাণু স্থাপনা নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
16 November 2025, 14:48 PM

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানিয়েছেন, তার দেশে কোনো 'গোপন' ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা নেই। দেশটির সব পরমাণু আহরণ ও সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার নজরদারিতে আছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি। 

মার্কিন গণমাধ্যমের দাবি

এমন সময়ে এই বক্তব্য এলো যখন ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমসসহ কয়েকটি মার্কিন গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, ইরান নতুন করে একটি গোপন পরমাণু স্থাপনার নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পরমাণু স্থাপনার নাম কুহ-এ কোলাং (কুড়াল পর্বত)।

এটি নাতানজ এর পরমাণু স্থাপনার কাছাকাছি অবস্থিত।

natanz.jpg
ইরানের নাতানজ পরমাণু স্থাপনা সংলগ্ন গুদামঘর। ফাইল ছবি: এএফপি

এসব দাবির প্রেক্ষিতে তেহরানের একটি সম্মেলনে আরাকচি বলেন, 'ইরানে কোনো অঘোষিত পরমাণু সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা নেই। আমাদের সবগুলো পরমাণু স্থাপনা জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক সংস্থার নজরদারিতে আছে।'

এখন পর্যন্ত ইরানের গণমাধ্যমে বা কর্মকর্তাদের মুখে এই তথাকথিত 'কুড়াল পর্বতের' কোনো উল্লেখ নেই।

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ 'বন্ধ'

আরাকচি আরও জানান, ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধে পরমাণু স্থাপনাগুলো ক্ষতির শিকার হয়েছে। যার ফলে 'সমৃদ্ধকরণ' প্রক্রিয়া বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ আছে। 

গত জুনে ইরানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েল। ১২ দিনের যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর যুগপৎ হামলা চালায়।

ওই যুদ্ধ শুরুর আগে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে নতুন পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল। ইসরায়েলি আগ্রাসনে এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া আলোচনা ভেস্তে যায়।

Iran attacks israel
ইসরায়েলের উপকূলীয় শহর নেতানিয়ার আকাশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। তবে এই হামলা যুদ্ধবিরতির আগে হয়েছে না পরে হয়েছে, তা জানা যায়নি। ছবি: এএফপি/২৪ জুন ২০২৫

ইরানের দাবি, শান্তিপূর্ণ কাজে তেজস্ক্রিয় উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার আছে তাদের। এ বিষয়টি নিয়েই মূলত ওয়াশিংটনের সঙ্গে মতবিরোধ ছিল তেহরানের।

আজ রোববার আবারও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানান, ইরানের এই অধিকার 'অস্বীকার' করার বা 'নাকচ' করার কোনো উপায় নেই। 

তবে একইসঙ্গে ইরান জানায়, তাদের সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো বড় আকারে ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং ইতোমধ্যে সমৃদ্ধকরণের মধ্য দিয়ে যাওয়া ইউরেনিয়াম ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে।

এ সপ্তাহের শেষভাগে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সির (আইএইএ) পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠককে সামনে রেখে এসব মন্তব্য করেন আরাকচি।

জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার সঙ্গে তেহরানের সম্পর্কে টানাপড়েন

-রোববারের সম্মেলনে তেহরানের কর্মকর্তারা আইএইএ'র বিরুদ্ধে ইরান-বিরোধী মনোভাবের অভিযোগ আনেন।

ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম গরিবাবাদি বলেন, 'ইরান আইএইএ'র সঙ্গে তাদের সম্পর্ক যাচাই করবে এবং একটি মৌলিক নিরীক্ষার আয়োজন করা হবে।'

১২ দিনের যুদ্ধের সময় ইরান অভিযোগ করে, তাদের পরমাণু স্থাপনার যাবতীয় তথ্য 'শত্রুর' (ইসরায়েলের) হাতে তুলে দিয়েছে আইএইএ। যুদ্ধশেষে সংস্থাটির সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে তেহরান।

বোমা হামলার শিকার পরমাণু স্থাপনায় সংস্থাটির কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকারও বন্ধ করে ইরান। 

সেপ্টেম্বরে পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন একটি কাঠামো সম্মতি দেয় ইরান ও আইএইএ। তবে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি নতুন করে ইরানের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করলে ওই সমঝোতাও ভেস্তে পড়ে। 

eslami_dw.jpg
ইরানের পরমাণু শক্তি কমিশন প্রধান মোহাম্মাদ ইসলামি। ফাইল ছবি: ইরানের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত

২৪ জুন থেকে ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চলছে। ইরান আবারও পরমাণু প্রকল্প চালু করলে হামলা করার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ইরানের পরমাণু শক্তি কমিশন প্রধান মোহাম্মাদ ইসলামি রোববার পরমাণু স্থাপনায় হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞে আইএইএ'র ভূমিকা ও দায় স্পষ্ট করার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, নতুন করে দরকষাকষি করার আগে এ বিষয়টি স্পট হওয়া আবশ্যক।

তিনি জানান, যুদ্ধের পর 'ইরানের পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে এবং এখনো দেশটি হুমকির মুখে আছে।'