ঐতিহাসিক অর্জনের পরও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় টেবিল টেনিস তারকারা
বাংলাদেশ টেবল টেনিসের ঘরে এসেছে ইতিহাস, কিন্তু হাসির মাঝেও উদ্বেগ গভীর। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যের নতুন অধ্যায় রচনা করলেও আর্থিক সংকট, অবকাঠামোর দুরবস্থা ও দীর্ঘদিনের অনিয়ম ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি করেছে প্যাডলারদের মনে।
সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে মিক্সড ডাবলসে জাভেদ আহমেদ ও খই খই চাকমা রুপা জিতে দেশের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। এতদিন দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে দলীয় ক্যাটাগরিতে ব্রোঞ্জই ছিল দেশের সেরা অর্জন, সেটিকে ছাড়িয়ে এই রূপা এনে দিয়েছে নতুন আশা, খুলেছে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।
আজ বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধিকারীরা জানালেন উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের সংগ্রামের গল্প। বাংলাদেশ টেবল টেনিস ফেডারেশন (বিটিটিএফ) সফলতার আনন্দে ভাসলেও টেবিল টেনিসের অংশগ্রহণ কমে যাওয়া, সুবিধাহীন অবকাঠামো ও আর্থিক সংকট টেনে ধরছে এগিয়ে চলার গতিকে।
সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ও বর্তমান কোচ মোস্তফা বিল্লাহ বলেন, 'দেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসেও এমন অর্জন হয়নি। আমরা ভালো ফলের আশা করেছিলাম, তবে এত বড় সাফল্য অপ্রত্যাশিত ছিল। ধারাবাহিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অনুশীলনের সুযোগ পাওয়ায়ই সম্ভব হয়েছে এই অর্জন।'
তিনি আশাবাদও ব্যক্ত করেন, ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের পর যেমন বদলে গিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট, তেমনভাবেই এই রূপা টেবল টেনিস পুনর্জাগরণের পথ দেখাতে পারে।
জাভেদের চোখে এটি দেশের টেবল টেনিস ইতিহাসের সর্বোচ্চ অর্জন, 'এটি এসেছে আমাদের পূর্ববর্তী সাফল্যের ধারাবাহিকতায়। দলীয় বোন্ডিংও রুপা জয়ের বড় কারণ।'
গত আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে থেমে যাওয়া খই খই মারমা বলেন, 'টার্গেট ছিল আগের সাফল্য ছাড়ানো, কিন্তু এবার ফাইনালে পৌঁছে অবাকই হয়েছি। দেশের জন্য কিছু করতে পেরে গর্বিত।'
সংবাদ সম্মেলনে বিটিটিএফ সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন মাকসুদ আহমেদ সনেট দুই প্যাডলারকে এক লাখ টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণা দেন। তবে তার কণ্ঠে ছিল শঙ্কার ছায়া, 'রুপা আমাদের সঠিক পথে এগোচ্ছে বলে জানান দেয়। কিন্তু আর্থিক সংকট ও প্রশিক্ষণ সুযোগ সীমিত থাকলে এই অগ্রগতি ধরে রাখা কঠিন হবে।'
তিনি জানান, আর্থিক সমস্যার কারণে জাতীয় ক্যাম্প চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে, শাহেদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামের এসি-সুবিধাও দীর্ঘদিন বন্ধ। ঘুরে দাঁড়াতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও বিওএ'র সহযোগিতা প্রয়োজন। এছাড়া ভারত বা ইরান থেকে বিদেশি কোচ আনার পরিকল্পনাও রয়েছে।
দেশে চার বছর ধরে কোনো জাতীয় প্রতিযোগিতা না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাভেদ-খই খই। জাভেদের ভাষায়, 'অন্য দেশগুলো উন্নত সুবিধা, আর্থিক নিরাপত্তা দিচ্ছে খেলোয়াড়দের। কিন্তু আমরা কিছুই পাচ্ছি না। সুবিধা না বাড়ালে আন্তর্জাতিক অর্জন ধরে রাখা কঠিন হবে। আমাদের পরিবার চালাতে কাজও করতে হয়, এটাই সবচেয়ে বড় বাধা।'
ঐতিহাসিক সফলতা তাই যেমন আনন্দ এনেছে, তেমনি সামনে রেখে গেছে বড় প্রশ্ন, বাংলাদেশ টেবিল টেনিস কি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবে? নাকি স্বপ্ন থেমে যাবে প্রাতিষ্ঠানিক অনুদান ও অবকাঠামোর ঘাটতিতে?