শিবপুরের বামপন্থীদের মুক্তিযুদ্ধ ও মান্নান ভূঁইয়া বাহিনী
মুক্তিযুদ্ধকালে নরসিংদীর শিবপুর ও এর সংলগ্ন জনপদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল একটি দুর্ধর্ষ গেরিলা বাহিনী। কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে ও বামপন্থী ছাত্রনেতা আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে গঠিত বাহিনীটি 'মান্নান ভূঁইয়া বাহিনী' নামে পরিচিত ছিল।
মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে এ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করেছেন ১ হাজার ২০০-এর বেশি মুক্তিযোদ্ধা। এ ছাড়া বাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৪ হাজারের বেশি মুক্তিযোদ্ধা। শিবপুরকে কেন্দ্র করে বাহিনীটি গড়ে উঠলেও এর বিস্তৃতি ছিল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থেকে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পর্যন্ত। এই বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি ইউনিয়ন 'দ্বিতীয় আগরতলা' নামে পরিচিত ছিল।
মুক্তিযুদ্ধে মান্নান ভূঁইয়া বাহিনীর বীরত্বগাথার কথা উল্লেখ রয়েছে একাধিক গ্রন্থে। এর মধ্যে হায়দার আনোয়ার খানের লেখা 'একাত্তরের রণাঙ্গন: শিবপুর', হায়দার আকবর খান রনোর আত্মজীবনী 'শতাব্দী পেরিয়ে', মান্নান ভূঁইয়া রচিত 'জীবন ও সংগ্রাম' উল্লেখযোগ্য। চলতি বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সরেজমিনে শিবপুর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বাহিনীটির ৩০-৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটির জনসভায় 'স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা' প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছিলেন তরুণ ছাত্রনেতারা। এরপরই তারা গোপনে সশস্ত্র বিপ্লবের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ মোস্তফা জামাল হায়দার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেই সভায় বক্তৃতা দেয়ায় কাজী জাফর, রাশেদ খান মেনন, মাহবুব উল্লাহ ও আমার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। পরবর্তীতে সামরিক আদালত আমাদের অনুপস্থিতিতে কাজী জাফর, রাশেদ খান মেননকে ৭ বছর এবং আমাকে ও মাহবুব উল্লাহকে ১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল।'
সংশ্লিষ্ট গ্রন্থসূত্র ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পল্টন ময়দানে পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার ঘোষণার পর বামপন্থী ছাত্রনেতারা গোপনে যুদ্ধ প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে থাকেন। এর আগে ১৯৬৫-৬৭ সালে মওলানা ভাসানীর নির্দেশে শিবপুরের বিভিন্ন গ্রামে কৃষক সমিতি গড়ে তুলেছিলেন তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন) সাধারণ সম্পাদক মান্নান ভূঁইয়া। একাত্তরের শুরু থেকেই মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে শিবপুরে ছাত্র-তরুণ-কৃষকদের পুরোদস্তুর সংগঠিত করতে শুরু করেন।
২৫ মার্চ বিকেলে শিবপুর পাইলট হাইস্কুলে আয়োজিত জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন মান্নান ভূঁইয়া। ২৫ মার্চ কালরাত্রির পর ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকা ছেড়ে শিবপুরে আসেন। এদের মধ্যে ছিলেন কাজী জাফর আহমদ, রাশেদ খান মেনন, হায়দার আনোয়ার খান রনো প্রমুখ। ঢাকা ছেড়ে শিবপুরে গিয়েছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানও। পরবর্তীতে তিনি শিবপুর হয়েই ভারতে যান।
২৭ মার্চ মান্নান ভূঁইয়ার নির্দেশে ও মান্নান খানের নেতৃত্বে ছাত্র-তরুণেরা শিবপুর থানার রাইফেল দিয়ে পাইলট হাইস্কুল মাঠে অস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু করেন। মান্নান খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেঙ্গল রেজিমেন্টের মজনু মৃধা, হারিস মোল্লার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ৩০-৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে আমি অস্ত্র সংগ্রহ ও উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যাই।'
মে মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল শিবপুরে আক্রমণ চালায়। এ সময় তারা চক্রধা গ্রামের কৃষক নেতা রব খান ও রফিক ডাকাতের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সুযোগে মজনু মৃধার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বান্ধাইধ্যা ব্রিজের কাছে অ্যামবুশের ফাঁদ পাতেন। অপারেশনে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিলিটারি বান্ধাইধ্যা ব্রিজে উঠতেই আমরা একসঙ্গে হামলা চালাই। এ সময় কয়েকজন মিলিটারি হতাহত হয়। আমরা সরে গেলেও মিলিটারি সকাল পর্যন্ত গুলি চালিয়ে যায়।'
এই যুদ্ধের পর শিবপুরের মুক্তিযোদ্ধারা বিলশরণ গ্রামের আবদুল খালেকের বাড়িতে সদর দপ্তর স্থাপন করে আশ্রাফপুর স্কুল মাঠে প্রশিক্ষণ শিবির চালু করেন বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা নঈমউদ্দিন। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা এ সময় নানাভাবে অস্ত্র সংগ্রহ শুরু করেন। এপ্রিল মাসে ডেমরা ও পাঁচদোনা যুদ্ধের পর বাঙালি সেনারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ফেলে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, 'নেভাল সিরাজ তখন অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করেছিলেন। মজনু মৃধা ও মান্নান খানের তৎপরতায় আমাদের কাছে অস্ত্রগুলো আসে।' সংগৃহীত এই অস্ত্র দিয়েই শিবপুরের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তোলেন বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা।
প্রথম দিকে শিবপুরের প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোতে বামপন্থী ছাত্রনেতা ও স্থানীয়রা প্রশিক্ষণ নিলেও ক্রমেই পুরো দেশেই শিবপুরের নাম ছড়িয়ে পড়ে। শিবপুরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বিস্তৃত এক যুদ্ধাঞ্চল। বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফ বলেন, 'দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত ছাত্র-তরুণ যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে শিবপুরে ছুটে আসেন।' এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কাজী জাফর আহমদের গ্রাম কুমিল্লার চিওড়া ইউনিয়নের বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধারাও। তারা শিবপুরে প্রশিক্ষণ নিয়ে পরবর্তীতে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায় থেকেই শিবপুরের যোশর বাজার ও পার্শ্ববর্তী আড়িয়াল খাঁ নদ শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ভারত যাতায়াতের অন্যতম রুট হয়ে ওঠে। ফলে এই এলাকাটি 'দ্বিতীয় আগরতলা' নামে পরিচিত ছিল। বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা চান মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের ভারতযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে যোশর বাজারের পাশে দামোদর ডাক্তারের বাড়িতে আমরা ক্যাম্প স্থাপন করি।'
মে মাসের শেষ সপ্তাহে মান্নান খানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণের জন্য ভারত যান। একই সঙ্গে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে হায়দার আনোয়ার খান জুনোর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি দলও প্রশিক্ষণ নিতে ভারত যায়। জুনের মাঝামাঝি সময়ে নুরুল হকের নেতৃত্বে আরেক দল মুক্তিযোদ্ধাকেও ভারতে পাঠানো হয়। এই মুক্তিযোদ্ধারা নির্ভয়পুর সাব-সেক্টরের কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহবুবুর রহমান বীর উত্তমের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ নেন।
জুন মাসে কলকাতায় ভারত ও বাংলাদেশের বামপন্থী নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে 'বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম কমিটি' গঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন হায়দার আকবর খান রনো। সভায় শিবপুরের একাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক উপস্থিত ছিলেন। এ সময় শিবপুরের নেতৃত্বস্থানীয় বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধারা আগরতলা ও পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত ও শিবপুরে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন।
জুন মাসের শেষ সপ্তাহে বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে শিবপুর, আশ্রাফপুর স্কুল, নিনগাঁও হাইস্কুল, বিলশরণ গ্রামের খালেকের বাড়ি, কামরাব হাইস্কুল, যোশর দামু ডাক্তারের বাড়ি, দড়িপুরা মহির ট্যাঁক, মোতালেবের ট্যাঁক, হোজ্জার ট্যাঁক, কোদালকাটা, ইটনা সর্দার বাড়ি, দত্তেরগাঁও কাচারি ও সাদারচর গারদসহ বিভিন্ন স্থানে মোট ১৪টি ক্যাম্প গড়ে ওঠে। বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক বলেন, 'বেশির ভাগ ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল। এসব ক্যাম্পে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় যুদ্ধ করতে ফিরে যেতেন।'
শিবপুরের মুক্তিযোদ্ধারা অন্তত ২০টি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এসব যুদ্ধের মধ্যে বানিয়াদির যুদ্ধ, পুটিয়া যুদ্ধ, ভরতেরকান্দি ব্রিজের যুদ্ধ, চন্দনদিয়া অপারেশন, দুলালপুর যুদ্ধ, কাজীরচর যুদ্ধ, ঘাসিরদিয়ার অ্যামবুশ, শিবপুর থানা অপারেশন ও নরসিংদী টিএন্ডটি অফিসে অপারেশন ছিল অন্যতম।
পাকিস্তানি বাহিনী যেন শিবপুরে প্রবেশ করতে না পারে, এই লক্ষ্যে ১১ আগস্ট মজনু মৃধার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও গ্রামবাসীরা মিলে পুটিয়া ব্রিজ ধ্বংস করেন। মুক্তিযোদ্ধারা আগেই অনুমান করেছিলেন, ব্রিজ ভাঙার শব্দ শুনে পাকিস্তানিরা আসতে পারে। তাই ব্রিজ ধ্বংসের পরপরই তাঁরা অতর্কিত আক্রমণের ফাঁদ পাতেন।
বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম মোল্লা জানান, বেলা ১১টার দিকে ছয়টি ট্রাকে অর্ধশতাধিক পাকিস্তানি সেনা পুটিয়া ব্রিজ পরিদর্শনে এলে অতর্কিত আক্রমণ গড়ে তোলেন মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা জবাব দেয়। দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধারা এ সময় নদীর পাড়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় তাঁদের আক্রমণে একের পর এক পাকিস্তানি সেনা নিহত হচ্ছিল। দুই পক্ষের মধ্যে চলা কয়েক ঘণ্টাব্যাপী এই যুদ্ধে এক ক্যাপ্টেনসহ ৩০ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। অন্যদিকে শহীদ হন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা ফজলু। এই যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা পুটিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্প করে। এ সময় তাদের সহযোগিতা করেন স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য মোসলেহউদ্দিন নোমানী, ওহিদ পাঠান প্রমুখ।
সেপ্টেম্বর মাসে বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা সাবেদ আলী, নিজামুদ্দিন, উসমানসহ বেশ কয়েকজন ডাকাতকে গুলি করে হত্যা করেন। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে ঘাসিরদিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। ক্রমান্বয়ে পাকিস্তানিদের যাতায়াত বৃদ্ধি পেলে সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন।
এ সময় মান্নান খানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা শাসপুর চৌরাস্তার পাশে ও মজনু মৃধার নেতৃত্বে আরেক দল মুক্তিযোদ্ধা চন্দরদিয়া পুলের কাছে অবস্থান নিয়ে আক্রমণের ফাঁদ পাতেন। কিন্তু পথিমধ্যে রাজাকারদের মাধ্যমে খবর পেয়ে পাকিস্তানি সেনারা মজনু মৃধার দলকে পেছন থেকে আক্রমণ করে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে পাকিস্তানি ট্রাকড্রাইভার গুলিবিদ্ধ হলে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে রাস্তার পাশে উল্টে পড়ে। এ সময় চারজন সেনা নিহত হয়। পাকিস্তানি সেনারা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় মান্নান খানের গ্রুপটিও এ সময় যোগ দেয়।
প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা যুদ্ধে শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা মানিক ও ইদ্রিস। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ও আমজাদ। নিহত হয় আরও কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। একপর্যায়ে দুটি পক্ষই মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে। গুলি শেষ হয়ে আসায় মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে গেলে পাকিস্তানিরা ধাওয়া দেয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ নিরাপদে সরতে পারলেও মুক্তিযোদ্ধা নজরুল রাইফেলসহ ধরা পড়েন। যদিও ১৯ নভেম্বর ঈদের আগের দিন তিনি ছাড়া পেয়েছিলেন।
মান্নান ভূঁইয়া বাহিনীর উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ ছিল ভরতেরকান্দি ব্রিজ অপারেশন। ব্রিজটি যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় পাকিস্তানি সেনারা ব্রিজের দুই পাশে বাংকার খনন করে নিয়মিত টহল দিত। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের একদিন গভীরে মজনু মৃধার নেতৃত্বে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দুই পাশ থেকে পাকিস্তানিদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালান।
বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম মোল্লা বলেন, 'আমাদের আক্রমণের শুরুতেই চার পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। তখন পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ চালায়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী চলা প্রচণ্ড যুদ্ধের একপর্যায়ে টিকতে না পেরে ছয়টি লাশ ফেলে পাকিস্তানি সেনা ও গার্ডরা পালিয়ে যায়।' এর পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা বিস্ফোরক বসিয়ে ব্রিজটি ধ্বংস করেন।
নভেম্বরে শেষ দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর শক্তি ক্ষয়ে আসায় তারাও শিবপুরে আসা কমিয়ে দেয়। এ সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের শক্তি জানান দিয়ে পাকিস্তানিদের তটস্থ করতে নতুন পন্থা অবলম্বন করেন। মান্নান খান বলেন, 'রাত ৯টা ও ভোররাতের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা দুই দফা ফাঁকা গুলি ছুড়তেন। এতে পুরো রাত পাকিস্তানিরা তীব্র অস্বস্তিতে ভুগত।'
নভেম্বরের শেষে মজনু মৃধা ও মান্নান খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা শিবপুর দখলে নেন। ৬ ডিসেম্বর মজনু মৃধার নেতৃত্বে বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা নরসিংদী দখলের সিদ্ধান্ত নিয়ে ১১ ডিসেম্বর নরসিংদী টিএন্ডটি ক্যাম্পে আক্রমণ চালান। টানা দেড় দিন ভয়াবহ যুদ্ধের পর ১৩ ডিসেম্বর ভোরে পাকিস্তানিরা ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়। মুক্ত হয় নরসিংদী।


