বাংলাদেশ দল চাঙা, তবে সমস্যা পিছু ছাড়ছে না

একুশ তাপাদার
একুশ তাপাদার
3 December 2025, 04:26 AM

সপ্তাহখানেক আগে সংবাদ সম্মেলনে লিটন দাস এসেছিলেন গোমড়া মুখে, বেরিয়ে গিয়েছিলেন ক্ষোভে ফুঁসে। এমনকি নেতৃত্বে থাকা নিয়েও সংশয় জেগেছিল তার।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষের দিন অবশ্য বাংলাদেশ অধিনায়ককে পাওয়া গেল একদম ভিন্ন মেজাজে। মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি হাসলেন, হাসালেন। নেতৃত্ব নিয়েও সংশয় উড়িয়ে বিশ্বকাপে স্বপ্নের কথা জানালেন। পিছিয়ে থেকে সিরিজ জেতার স্বস্তির পাশাপাশি নির্বাচকদের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলাও হয়তো কারণ। তবে সব অস্বস্তি যে দূর করা গেছে এমন না।

'বিশ্বকাপে ভালো খেললেই হলো,' লিটন দাস কথাটা বলে একটু হাসলেন। কথাটা বলেছেন সদ্যসমাপ্ত সিরিজে মিডল অর্ডারে যারা রান পাননি তাদের নিয়ে। এতে একটা বিষয় পরিষ্কার, মিডল অর্ডারের ব্যাটাররা রান না পেলেও আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের জায়গা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। 

শুধু এই সিরিজ না, বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের মিডল অর্ডার নিষ্প্রভ অনেকদিন ধরেই। মাঝে-মধ্যে রান এলেও সেটা ম্যাচের ফলের জন্য প্রভাবক হয় না। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও এই সংকট থেকে বের হওয়ার আভাস মেলেনি। তবে পিছিয়ে থেকে সিরিজ জিতে নেওয়ায় যা হয় আরকি— জিতে গেলে অনেক রোগই সাময়িকভাবে পড়ে যায় আড়ালে। 

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জেতা ছিল একদমই প্রত্যাশিত। এমনকি র‍্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা দলটির বিপক্ষে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে জিতলেও সেটা নিয়ে খুব একটা বাড়বাড়ির অবকাশ নেই। জেতার বাইরে বিশ্বকাপ সামনে রেখে আসলে ঘাটতির জায়গা পূরণ হলো কিনা এটা বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশ দল আপাতত এই প্রশ্ন এড়াতে চায়। 

এই সিরিজে যেমন প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ ছিলেন জাকের আলী অনিক, তার বদলে দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়ে আরও ব্যর্থ হন নুরুল হাসান সোহান। শেষ ম্যাচে তাকেও বাইরে রাখা হয়। তবে জাকের-সোহানের রান না পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ নেই অধিনায়কের, 'না ভাইয়া, আমি খুব একটা উদ্বিগ্ন না। আমি আগেও বলেছি যে, আমাদের প্রত্যেকটা বিভাগ ও প্রত্যেকটা খেলোয়াড় (প্রতিদিন) ভালো খেলবে, এমন না। আর আপনি দেখুন, (তাওহিদ) হৃদয় অনেকদিন ধরে সংগ্রাম করছিল। কিন্তু এই সিরিজে সে বড় রান পেয়েছে। তার মানে, প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ই সক্ষম বড় রান করতে। তাদেরকে একটু সময় দিতে হবে।'

বিতর্কিতভাবে দল থেকেই বাদ পড়ার পর নাটকীয়ভাবে একাদশে ফেরা শামীম হোসেন তৃতীয় ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। আর শুরু থেকে স্কোয়াডে থেকেও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের খেলারই সুযোগ হয়নি। লিটনের ভাষায়, 'অঙ্কন দুর্ভাগা, আরও কিছু ম্যাচ থাকলে হয়তো সুযোগ পেতে পারত।'

সিরিজ জেতার ট্রফি নিয়ে তা অঙ্কনের হাতে দিয়ে ছবি তুলেছে বাংলাদেশ দল। এই সান্ত্বনাই আপাতত তার প্রাপ্তি। তবে বাংলাদেশের ঠিক পরের আন্তর্জাতিক ম্যাচ যেহেতু বিশ্বকাপের মঞ্চে, সেখানে অঙ্কনের থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

সবশেষ বহুজাতিক আসর এশিয়া কাপে মিডল অর্ডার সংকটেই ডুবেছে বাংলাদেশ। নিয়মিত কেউ ব্যর্থ হলেও বিকল্পের অভাব, বিশেষজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটারের ঘাটতি ছিল প্রকট। চলতি বছর ৩০টি ম্যাচ খেলা বাংলাদেশ এই জায়গায় ভিন্ন কিছুর খোঁজও করেনি।

বিশ্বকাপেও লিটনের নেই অন্য কোনো ভাবনা, 'আমার কাছে এটা নিয়ে কখনোই দ্বিতীয় কোনো চিন্তা আসেনি ওখানে কাউকে চেষ্টা করে দেখার জন্য। আমার কাছে মনে হয়, যেসব খেলোয়াড় এখানে আছে, তাদের খুবই সামর্থ্য আছে বিশ্বকাপে খেলার জন্য। যদি কোনো খেলোয়াড় (সামনের বিপিএলে) অসাধারণ ক্রিকেট খেলে, অবশ্যই তার জন্য জায়গা খোলা থাকবে। তবে আপনাকে একইসঙ্গে এটা বুঝতে হবে, যে খেলোয়াড় পারফর্ম করছে, তার কি দলে জায়গা নিশ্চিত না? আপনি পারফর্ম করার খেলোয়াড়কে বাদ দিতে পারবেন না।'

বিকল্পের দিকে না তাকানো বাংলাদেশ অধিনায়কের আকুতি এদের কেউ যেন চোটে না পড়েন, 'বড় ব্যাপার, সবচেয়ে বড় যে খারাপ ঘটনা সব সময় হয়, সেটা হলো চোট। দোয়া করুন, কারও যেন চোট না হয়।'

আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার প্রায় দুই মাস আগে স্কোয়াড যে প্রায় তৈরি তা নিশ্চিত করে ফেললেন লিটন। তার ভাষায়, 'দল তো মোটামুটি তৈরিই আছে।'

বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ নিয়ে খুব একটা প্রশ্নের অবকাশ নেই। ১৫ জনের দলে কারা থাকবেন এখনই বলে দেওয়া যায়। তবে ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নের জায়গা আছে নড়বড়ে ও অধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে। বিশেষ করে, বহুজাতিক আসর ও বড় ম্যাচে ব্যর্থতা বারবারই দ্বি-পাক্ষিক সিরিজের সাফল্যকে কাঠগড়ায় তুলছে।

অনেক আগেই দল তৈরি হয়ে যাওয়া, থিতু দল নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়া অবশ্যই ইতিবাচক ব্যাপার। তবে পারফরম্যান্সের ঘাটতি থাকলে সেটাই হয়ে যেতে পারে বুমেরাং।